রবিবার

,

২৩শে মার্চ, ২০২৫

রাইজ আপ নিউ ইয়র্ক সিটির দ্বিতীয় লিডারশিপ সামিট অনুষ্ঠিত

নিজস্ব প্রতিবেদক
ছবি: সংগৃহীত

নিউ ইয়র্কের বাংলাদেশি আমেরিকান সম্প্রদায়ের জন্য প্রথমবারের মতো একটি নির্বাচনি প্রার্থী ফোরাম আয়োজন করেছে দ্য রাইজ আপ নিউ ইয়র্ক সিটি, ইনক। শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) জ্যাকসন হাইটসের গুলশান টেরেসে সামিট অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি আমেরিকান অংশগ্রহণ করেন। এ সময় অনুষ্ঠানটি বিভিন্ন চ্যানেলে লাইভ সম্প্রচার করা হয়।

এই ফোরামের মাধ্যমে বাংলাদেশি আমেরিকানরা প্রথমবারের মতো নিউ ইয়র্ক সিটির মেয়র, কম্পট্রোলার, পাবলিক অ্যাডভোকেট এবং সিটি কাউন্সিলর পদের একাধিক প্রার্থীদের সাথে একই অনুষ্ঠানে সরাসরি সংলাপে অংশ নেওয়ার সুযোগ পান। এ আয়োজনটি তাদের প্রার্থীদের দৃষ্টিভঙ্গি বোঝার এবং বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের জন্য কীভাবে তারা কাজ করতে চান, তা মূল্যায়নের সুযোগ দেয়।

রাইজ আপ নিউ ইয়র্ক সিটির প্রেসিডেন্ট শামসুল হক এই ইভেন্টের সূচনা বক্তব্যে বাংলাদেশি আমেরিকানদের ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক প্রভাব এবং প্রতিনিধিত্ব বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি CUNY এবং নিউ ইয়র্ক সিটি রিডিস্ট্রিক্টিং কমিশনের প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশিরা নিউ ইয়র্ক সিটির সর্ববৃহৎ মুসলিম জনগোষ্ঠী এবং দ্বিতীয় বৃহত্তম এশিয়ান গোষ্ঠী, তবুও তারা এখনও সরকার এবং নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে পর্যাপ্ত প্রতিনিধিত্ব পায়নি।

তিনি আরো বলেন, অনেক বছর ধরে আমাদের সম্প্রদায়কে মূলধারার রাজনৈতিক আলোচনায় উপেক্ষা করা হয়েছে। আজকের এই ফোরামের মাধ্যমে আমরা আরও একধাপ এগিয়ে গেলাম। এটি একটি বার্তা যে আমরা সম্পৃক্ত, আমরা সক্রিয়, এবং আমরা নিউ ইয়র্ক সিটির ভবিষ্যত গঠনে ভূমিকা রাখতে প্রস্তুত।

 

 

অনুষ্ঠানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের উল্লেখযোগ্য প্রার্থীরা অংশগ্রহণ করেন। তাদের মধ্যে ছিলেন–
• নিউ ইয়র্ক সিটির মেয়র প্রার্থী: জোহান মামদানি, ব্র্যাড ল্যান্ডার, এবং মাইকেল ব্লেক
• নিউ ইয়র্ক সিটির কম্পট্রোলার প্রার্থী: ইসমাইল মালাভে, মার্ক লেভিন, এবং জাস্টিন ব্র্যানান
• পাবলিক অ্যাডভোকেট প্রার্থী: জুমানে উইলিয়ামস এবং জেনিফার রাজকুমার
• বিভিন্ন জেলার সিটি কাউন্সিল প্রার্থীরা: এডি মারেরো (ডিস্ট্রিক্ট ১৩–ব্রঙ্কস), জানা হেনরিকেজ (ডিস্ট্রিক্ট ২১), হিরাম মনসেরাটে (ডিস্ট্রিক্ট ২১), শানেল থমাস-হেনরি (ডিস্ট্রিক্ট ২১), রিকার্ডো পাচেকো (ডিস্ট্রিক্ট ২৫), এবং শাহ হক (ডিস্ট্রিক্ট ২৫)।

প্রার্থীরা জননিরাপত্তা, শিক্ষা, অর্থনৈতিক সুযোগ এবং অভিবাসী অধিকারের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তাদের প্রতিশ্রুতি তুলে ধরেন, যা বাংলাদেশি আমেরিকান সম্প্রদায়ের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শ্রোতারা উচ্ছ্বসিত প্রতিক্রিয়া জানিয়ে তাদের বক্তব্যকে সমর্থন করেন।

সফল এ আয়োজনের পেছনে ছিল রাইজ আপ নিউ ইয়র্ক সিটির নির্বাহী বোর্ড, ট্রাস্টি এবং স্বেচ্ছাসেবকদের কঠোর পরিশ্রম এবং একনিষ্ঠতা। সংগঠনের ট্রাস্টি একেএম আলম (প্রিন্স) বলেন, আমাদের লক্ষ্য বাংলাদেশি আমেরিকানদের কণ্ঠস্বর নিউ ইয়র্ক সিটির রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও প্রভাব বিস্তার করবে তা নিশ্চিত করা ।

এই ইভেন্টের সফল বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন রাইজ আপ নিউ ইয়র্ক সিটির নির্বাহী বোর্ডের সদস্যরা। সংগঠনের প্রেসিডেন্ট শামসুল হকের নেতৃত্বে এই আয়োজন বাস্তবায়িত হয়। এছাড়া ভিপি অব ইভেন্টস ইশমাম চৌধুরী, ভিপি অব মিডিয়া অ্যাফেয়ার্স জামিল সারোয়ার, ভিপি অব কমিউনিকেশনস এম. লতিফ, ভিপি অব ফাইন্যান্স মোহাম্মদ আব্দুল জলিল এবং অন্যান্য নির্বাহী সদস্যরা সম্মিলিতভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। সংগঠনের ট্রাস্টি বোর্ডেও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ রয়েছেন, তাঁদের মধ্যে আছেন একেএম আলম (প্রিন্স), শাইখ আহমেদ, মোঃ আশিকুল ইসলাম, মোহাম্মদ আলী চৌধুরী প্রমুখ।

রাইজ আপ নিউ ইয়র্ক সিটি ২০২১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের জন্য সুরক্ষা, প্রতিনিধিত্ব এবং ন্যায়বিচারের জন্য কাজ করার লক্ষ্যে। সংগঠনটি নির্বাচনসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোতে কাজ করছে। যার মধ্যে রয়েছে, বাংলাদেশি আমেরিকান সম্প্রদায়ের মধ্যে ভোটার নিবন্ধন বৃদ্ধি করা, নির্বাচন সংক্রান্ত তথ্য প্রদান ও সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণে উৎসাহিত করা, উচ্চ পর্যায়ের সরকারি পদে নিয়োগের সুযোগ তৈরি করা, বাংলাদেশি পরিচালিত অলাভজনক সংস্থাগুলোর জন্য নগর অর্থায়নের সুযোগ নিশ্চিত করাসহ বাংলাদেশি গণমাধ্যমের জন্য সরকারি বিজ্ঞাপন ও প্রচার প্রচেষ্টার ন্যায়সঙ্গত সুযোগ নিশ্চিত করা।

নির্বাচন প্রসঙ্গে প্রেসিডেন্ট শামসুল হক বলেন, এই ইভেন্টের সাফল্য প্রমাণ করে যে, একসঙ্গে কাজ করলে আমরা অনেক কিছু অর্জন করতে পারি। আমাদের সম্প্রদায়ের সবাইকে ভোটার নিবন্ধন করতে হবে, ভোট দিতে হবে এবং রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় থাকতে হবে। আমাদের আর অদৃশ্য হয়ে থাকার সময় নেই।

রাইজ আপ নিউ ইয়র্ক সিটি সকল বাংলাদেশি আমেরিকানদের এই আন্দোলনে যোগ দিতে, আগত ইভেন্টে অংশ নিতে এবং নিউ ইয়র্ক সিটির রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় আরও সক্রিয় ভূমিকা রাখতে আহ্বান জানায়।