নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন কুর্দিস্তান ওয়ার্কাস পার্টি- পিকেকের বিলুপ্তিতে তুরস্কের রাজনীতিতে নতুন যুগের সূচনা হবে বলে মন্তব্য করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইপ এরদোয়ান। জাতির উদ্দেশে ভাষণে এ কথা জানিয়েছেন এরদোয়ান।
পিকেকের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে কুর্দি সম্প্রদায়ের জনগণ। যদিও বিশ্লেষকদের দাবি, বিলুপ্তির অর্থ সংঘাতের সমাপ্তি নয়।
পিকেকে বিলুপ্তের খবরে মঙ্গলবার ছেয়ে যায় তুরস্কের প্রায় সবকটি পত্রিকা। নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনটির এমন সিদ্ধান্তে ব্যবহার করা হয় গেম ওভার কিংবা ঐতিহাসিক দিনের মতো শিরোনাম।
গেল ফেব্রুয়ারিতে যোদ্ধাদের অস্ত্রসমর্পণের ডাক দিয়ে সংগঠন বিলুপ্ত করার আহ্বান জানান ২৬ বছর ধরে কারাবন্দি নেতা আবদুল্লাহ ওকালান। এরপরই তাৎক্ষণিক অস্ত্রবিরতির ঘোষণা দেয় কুর্দিস্তান ওয়ার্কাস পার্টি পিকেকে।
তুরস্কের প্রেসিডেন্টের দাবি, পিকেকের বিলুপ্তি দেশের রাজনীতিতে নতুন যুগের সূচনা করবে। পাশাপাশি গোটা অঞ্চলে ফিরবে স্থিতিশীলতা। বিপরীতে কুর্দিনের আশা, এই সিদ্ধান্তের ফলে গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পাবে এই সম্প্রদায়ের মানুষ।
কুর্দিন বাসিন্দাদের একজন বলেন, ‘তুরস্ক আমাদের সামাজিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে দিবে। তাই স্বাভাবিকভাবে পিকেকের বিলুপ্তি প্রয়োজন ছিল।’
আরেকজন বলেন, ‘আমার মতে কুর্দিদের স্বাধীনভাবে বাঁচার পাশাপাশি সম অধিকার ফিরে পাবার ক্ষেত্রে এই সিদ্ধান্তটি ভূমিকা রাখবে।’
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘সন্ত্রাসী গোষ্ঠীটি সংগঠনের বিলুপ্তি ও অস্ত্র সমর্পণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা একে গুরুত্ব সহকারে দেখছি। কারণ এর মাধ্যমে দেশের নিরাপত্তা দৃঢ় হবে, আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরবে। পাশাপাশি ভ্রাতৃত্ববোধ বাড়বে।’
তবে এতটা আশাবাদী হতে পারছেন না বিশ্লেষকরা। তাদের অভিমত, সংগঠন বিলুপ্তির অর্থ সংঘাতের সমাপ্তি নয়।
বন ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর কনফ্লিক্ট স্টাডিজের গবেষক ক্যারিনা ইলদিরিম বলেন, ‘দশকের পর দশক ধরে কুর্দিরা তাদের স্বাধীনতা ও অধিকারের জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। তাই একদিনেই এই সংঘাতের সমাপ্তি সম্ভব নয়। যদিও রাজনৈতিক সংলাপ ও সমাধানের ক্ষেত্রে এটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।’
১৯৭৮ সালের নভেম্বরে প্রতিষ্ঠাতা আব্দুল্লাহ ওকালানের হাত ধরে যাত্রা শুরু করে কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি- পিকেকে। এরপর ১৯৮৪ সাল থেকে শুরু করে চার দশকে অসংখ্যবার তুরস্কের সাথে যুদ্ধে জড়িয়েছে গোষ্ঠীটি। গেলো ৪ দশকের লড়াই প্রাণ হারিয়েছেন কমপক্ষে ৪০ হাজার মানুষ।