রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের দেড় বছরেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও যুদ্ধ থামাতে দায়িত্বশীল কেউ এগিয়ে আসেনি। নির্বাচিত হওয়ার আগে থেকেই ডোনাল্ড ট্রাম্প চলমান এই যুদ্ধ থামানোর বিষয়ে কথা বলেছেন। দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর থেকে চেষ্টা করে চলেছেন যুদ্ধ বন্ধের।
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বৃহস্পতিবার ইউক্রেনে ৩০ দিনের নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতির জন্য ফের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি রাশিয়াকে হুঁশিয়ার করে বলেছেন, যুদ্ধবিরতি না মানলে নতুন নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়তে হবে।
ওয়াশিংটন থেকে এএফপি জানায়, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলার পর ট্রাম্প এই বক্তব্য দেন। চলমান যুদ্ধে কিয়েভ ও মস্কো, উভয়ের প্রতি বাড়তে থাকা হতাশার মধ্যে নিজেকে শান্তির মধ্যস্থতাকারী হিসেবে উপস্থাপনের চেষ্টা করছেন তিনি।
ট্রাম্প বলেন, ‘রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে আলোচনা চলছে। আমেরিকা চায় অন্তত ৩০ দিনের একটি নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতি।’ ট্রুথ সোশ্যাল-এ দেওয়া এক বার্তায় তিনি আরও বলেন, ‘যদি এই যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করা হয়, তবে আমেরিকা ও তার অংশীদাররা অতিরিক্ত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘উভয় দেশকে এই সরাসরি আলোচনার পবিত্রতা রক্ষা করতে হবে। এ যুদ্ধ থামাতে তারা দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবে।’
জেলেনস্কি রাশিয়াকে দ্রুত যুদ্ধবিরতি মেনে নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘এটি প্রমাণ করার সময় এসেছে যে তারা সত্যিই যুদ্ধ থামাতে চায়।’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক বার্তায় তিনি লেখেন, ‘ইউক্রেন এখনই, এই মুহূর্ত থেকে, পুরোপুরি যুদ্ধবিরতির জন্য প্রস্তুত। ৩০ দিনের নীরবতা। তবে সেটি হতে হবে বাস্তব। কোনো ক্ষেপণাস্ত্র বা ড্রোন হামলা নয়, সামনের সারিতে শত শত আক্রমণ নয়।’
মার্চ মাসে ইউক্রেন আমেরিকার প্রস্তাবিত ৩০ দিনের নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতির পরিকল্পনা গ্রহণ করলেও, রাশিয়া তা প্রত্যাখ্যান করে। কারণ হিসেবে তারা বলছে, যুদ্ধক্ষেত্রে তাদের পাল্লা এখন ভারী এবং ট্রাম্পের আমলে ইউক্রেনে আমেরিকার সহায়তা হ্রাস পাচ্ছে।
এদিকে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তির ৮০তম বার্ষিকী উপলক্ষে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তিন দিনের একতরফা যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিয়েছেন। দিনটি উদযাপনে মস্কোতে বিশাল সামরিক কুচকাওয়াজ আয়োজন করা হয়, যেখানে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং উপস্থিত ছিলেন।
কিয়েভের ৭৩ বছর বয়সী বাসিন্দা আনাতোলি পাভলোভিচ বলেন, ‘রাশিয়া কবে তাদের কথা রেখেছে?’
হোয়াইট হাউসে ফিরলে একদিনেই যুদ্ধ শেষ করে দেবেন, এমন প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসা ট্রাম্প ইতোমধ্যে পুতিনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। এর মাধ্যমে ২০২২ সালে ইউক্রেনে আগ্রাসনের পর থেকে রাশিয়ার ওপর পশ্চিমাদের আরোপিত কূটনৈতিকভাবে একঘরে করে রাখার নীতিও কার্যত ভেঙে দিয়েছেন তিনি।
তবে যুদ্ধ চলতে থাকায় এখন ট্রাম্পের মধ্যে জেলেনস্কি ও পুতিন, উভয়ের প্রতিই অসন্তোষ দেখা যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, তিনি একটি দীর্ঘস্থায়ী শান্তি চান। ‘এটি খুব দ্রুতই সম্ভব। আমাকে দরকার হলে যেকোনো মুহূর্তে আমি প্রস্তুত,’ তিনি লেখেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও একাধিকবার সতর্ক করেছেন যে, কোনো অগ্রগতি না হলে আমেরিকা হয়তো এই প্রচেষ্টা বাদ দিয়ে অন্য ইস্যুতে মনোযোগ দেবে।
আগামী সপ্তাহে ট্রাম্প সৌদি আরব সফরে যাচ্ছেন। দেশটি রাশিয়া ও ইউক্রেনের সঙ্গে আমেরিকার পৃথক আলোচনা আয়োজনের স্থান হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
সাংবাদিকরা জানতে চাইলে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি মনে করি না যে সৌদি আরবে পুতিনের সঙ্গে হঠাৎ কোনো বৈঠক হবে। তবে আমরা খুব ভালো কথা বলছি, সত্যিই খুব ভালো।’