শনিবার

,

২৬শে এপ্রিল, ২০২৫

তারেক রহমানকে নিয়ে দ্য উইকের কাভার স্টোরি ‘নিয়তির সন্তান’

নিজস্ব প্রতিবেদক
ছবি: সংগৃহীত

ব্রিটিশ সাপ্তাহিকী দ্য উইক নিউজ ম্যাগাজিন চলতি সংখ্যায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানকে নিয়ে কাভার স্টোরি করেছে। যার শিরোনাম ‘ডেসটিনি’স চাইল্ড’ বা ‘নিয়তির সন্তান’। ম্যাগাজিনটি নয়াদিল্লি ব্যুরো চিফ নম্রতা বিজি আহুজার লেখা ওই শীর্ষ প্রতিবেদনে বলা হয়, আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক বিএনপি ভাঙার চেষ্টার বিপরীতে তারেক রহমানের নেতৃত্বেই দল ঐক্যবদ্ধ রয়েছে এবং তারেক রহমান পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথে রয়েছেন। কারণ দিন দিন তাঁর জনপ্রিয়তা বাড়ছে।

প্রচ্ছদ প্রতিবেদনে বলা হয়, ৫৭ বছর বয়সী তারেক তাঁর মায়ের পদাঙ্ক অনুসরণ করছেন। কারণ বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া পুনরায় শুরু করার চেষ্টা করছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে পরিবর্তন তারেক রহমানকে একটি সুযোগ এনে দিয়েছে।

তারেক রহমান সমর্থকদের কাছে ‘তারেক জিয়া’ নামে পরিচিত।

তিনি সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার পুত্র। মুক্তিযোদ্ধা ও জেনারেল জিয়া বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৮১ সালে কতিপয় বিপথগামী সেনা কর্মকর্তার হাতে নিহত হওয়ার পর খালেদা জিয়া দলের হাল ধরেন। খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনা ১৯৯০ সালের গণ-অভ্যুত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন, যা রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের পতন ঘটায়।

এতে বলা হয়, ৫৭ বছর বয়সী তারেক এখন তাঁর মায়ের পদাঙ্ক অনুসরণ করছেন। আওয়ামী লীগ সরকারকে সরিয়ে দেওয়ার পর বিএনপি দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। ঢাকায় তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন নিয়ে ব্যাপক উত্তেজনা বিরাজ করছে। তিনি বর্তমানে লন্ডনে অবস্থান করছেন।

তারেক রহমান ভার্চুয়ালি দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বক্তব্য দিচ্ছেন।

ঢাকায় নামার পর তাঁর জীবনে পূর্ণ চক্র সম্পূর্ণ হবে। খালেদা জিয়া আশা করছেন, তারেকই আসন্ন নির্বাচনে দলের মুখ হিসেবে আবির্ভূত হবেন।

‘তারেক এরই মধ্যে একটি সুস্পষ্ট পরিকল্পনা করেছেন’, বলেন তাঁর উপদেষ্টা মাহদী আমিন। ‘চাকরি, জনস্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষক, শ্রমিক বা শ্রমজীবী যে-ই হোক না কেন, আমরা তাদের সমান সুযোগ, ন্যায্য মজুরি এবং দুর্নীতিমুক্ত একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা দিতে চাই,’ বলেন বিশ্বব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা এবং তারেকের উপদেষ্টা ড. জিয়াউদ্দিন হায়দার। ‘আমরা একটি জ্ঞানভিত্তিক ও উন্নয়নকেন্দ্রিক রাজনীতি গড়ে তুলতে তারেকের দৃষ্টিভঙ্গি বাস্তবায়ন করতে চাই।’

জর্জিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির পিএইচডি গবেষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক আসিফ বিন আলী বলেন, ‘তিনি নির্বাসনে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন এবং সামরিক-প্রশাসনিক কর্তৃত্ব তাঁর কাছ থেকে লিখিত অঙ্গীকার নিয়েছিল যে তিনি ভবিষ্যতে আর রাজনীতিতে জড়াবেন না। এটি ছিল তাঁর রাজনৈতিক অধিকারের লঙ্ঘন।’

১৬ বছরের নির্বাসনকালে তারেক ব্যক্তিগত ক্ষতির সম্মুখীন হন (তিনি তাঁর ছোট ভাই আরাফাত রহমান কোকোকে হারান) এবং বহু আইনি ও রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হন। তবু তিনি বিএনপিতে প্রভাবশালী থেকে যান এবং দলকে একত্র রাখেন। ‘আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক দল ভাঙার চেষ্টার বিপরীতে তারেক ও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরই দলকে ঐক্যবদ্ধ রেখেছেন,’ বলেন আসিফ আলী।

২০০৯ সালে দলের পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিলে তারেক বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন এবং ২০১৬ সালে পুনর্নির্বাচিত হন। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় তাঁর মায়ের কারাবরণের পর থেকে তিনি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ‘তারেক বাংলাদেশের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথে রয়েছেন। কারণ তাঁর জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে,’ বলেন আলী।

তারেক ১৯৮৮ সালে রাজনীতিতে ঢোকেন। তিনি ১৯৯১ সালের নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেন, কিন্তু পরে খুব একটা সক্রিয় ছিলেন না, যদিও বিএনপি সরকার গঠন করে। তিনি ২০০১ সালের নির্বাচনী প্রচারে পুনরায় সক্রিয় হন এবং বিএনপি নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করে। এই সময়ে তিনি দলে উল্লেখযোগ্য প্রভাব অর্জন করেন।

২০০৭ সালে ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে একটি সামরিক সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয় এবং তারেক তাঁর মায়ের সঙ্গে বন্দি হন। দুই বছরের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শাসনকালে অনেক শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক নেতাকে গ্রেপ্তার ও নির্যাতন করা হয়। তারেক ২০০৮ সালের নির্বাচন-পূর্বে মুক্তি পান এবং চিকিৎসার জন্য প্যারোলে লন্ডনে যাওয়ার অনুমতি পান।

সাময়িকীটি মনে করে, বাংলাদেশে পরিবর্তন তারেকের জন্য একটি সুযোগ, যাতে তিনি তাঁর পূর্বসূরিদের ধারা ভেঙে নিজস্ব একটি উত্তরাধিকার তৈরি করতে পারেন।