ফিলিস্তিনের গাজায় বেসামরিক লোকজনের ওপর ইসরায়েলের হামলার প্রতিবাদে এবং অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনির স্বাধীনতার দাবিতে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের প্রতিটি জেলা, উপজেলা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ-মিছিল ও মানববন্ধন হয়েছে। এসময় বিক্ষােভকারীরা ইসরায়েলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পণ্য বর্জনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি মুক্তিকামী মানুষের পক্ষে দাঁড়াতে বিশ্ববাসীর প্রতি আহ্বানও জানিয়েছেন।
সোমবার বিশ্বব্যাপী ‘নো ওয়ার্ক, নো স্কুল’ শীর্ষক কর্মসূচির সঙ্গে সংহতি জানিয়ে কর্মসূচি পালন করা হয়। এর আগে গত ৫ এপ্রিল প্রথম এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয় ‘ট্রান্সলেটিং ফালাস্তিন’ নামের একটি ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট থেকে। সারাদেশের স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষজন স্বতঃস্ফূর্তভাবে ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নেয়।
রাজধানীর বায়তুল মোকাররম ও গুলশান এলাকায় বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। সোমবার বিকেল চারটায় মহাখালীতে পথসভা সভা করে দলটি। এরপর সেখান থেকে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তরের সেক্রেটারি মুহাম্মদ রেজাউল করিমের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি মহাখালী থেকে নাবিস্কো হয়ে মগবাজারে এসে শেষ হয়।
পথসভায় রেজাউল করিম ফিলিস্তিনের গাজায় দখলদার ইসরাইলি বাহিনীর হত্যা ও নিধনযজ্ঞ আইয়্যামে জাহিলিয়াতের নির্মমতা ও বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন। গাজায় গণহত্যা বন্ধে জাতিসংঘ, ওআইসি, আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহ ও বিশ্বের শান্তিপ্রিয় মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে জোরালো পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান এই নেতা। পাশাপাশি তিনি ইসলামি রাষ্ট্রগুলোকে একত্র করে ইসলামি সহযোগিতা সংস্থাকে (ওআইসি) এ যুদ্ধ বন্ধে অবিলম্বে বৈঠক ডাকার আহ্বানও জানান।
ফিলিস্তিনের গাজার রাফায় ইসরায়েলি হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে মুসলিম সচেতন নাগরিক হিসেবে সবাইকে ইসরায়েলি পন্য বয়কটের আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় ক্রীড়া সম্পাদক ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহবায়ক আমিনুল হক। সোমবার দুপুরে রাজধানীর উত্তরায় তিনি এ আহবান জানান।
তিনি ফিলিস্তিনে সব শহিদের আত্মার মাগফেরাত কামনা ও শোক প্রকাশ করেন এবং ইসরায়েল যুদ্ধ নীতি ভঙ্গ করে গাজায় যে হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে। মুসলমানদের ওপরে এই ধরনের হত্যাযজ্ঞ আমরা আর দেখতে চাই না বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এসময় অনুষ্ঠানে কোমল পানীয় ইসরায়েলি পণ্য হওয়ায় ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হকের আহ্বানে খাবার টেবিল থেকে পণ্যটি ফেলে দেয় হাজারও নেতাকর্মী।
এদিন সকাল থেকেই রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন সড়কে বিক্ষোভ শুরু করেন মুসল্লিরা।
জানা যায়, সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বেশ কয়েকটি বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন শিক্ষার্থীরা। বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেটে বিক্ষোভ সমাবেশ করে হেফাজতে ইসলাম।
মিরপুরসহ একাধিক স্থানে মিছিল-সমাবেশ করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।
আর গাজাবাসীর ডাকা হরতালের সমর্থনে রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউতে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে বিক্ষুব্ধ জনতা। এসময় ওই এলাকার চারদিকে বিক্ষোভকারীদের ঢল নেমেছে। সংসদ ভবনের সামনে বিক্ষোভকারীদের হাতে বিভিন্ন ফটোকার্ড ও ব্যানার নিয়ে মিছিল নিয়ে সমবেত হয়েছেন হাজার হাজার মানুষ।
এদিন রাজধানী ঢাকাসহ চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর, সিলেট, খুলনা, বরিশাল, ময়মনসিংহ, গাজীপুর, নারায়নগঞ্জসহ দেশের প্রত্যেকটি জেলা এবং উপজেলায় বিক্ষোভ করেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন।
এ ছাড়া এদিন গাজাবাসীর ডাকে ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ রেখে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও স্কুলে বিক্ষোভ মিছিল প্রদর্শন করেছেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
এসব সমাবেশ থেকে গাজায় ইসরোয়েলি হামলা ও গণহত্যা বন্ধের দাবি জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা, গাজায় গণহত্যার বিচার নিশ্চিত করতে মুসলিমবিশ্ব, ওয়াইসি ও জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন বিক্ষোভকারীরা।