বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, ‘আগামী দিনে যাতে আর কোনো ফ্যাসিস্ট ও স্বৈরাচার জনগণের অধিকার কেড়ে নিতে না পারে, সেজন্য গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার প্রক্রিয়া, পদ্ধতি প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নের এখনই উপযুক্ত সময়।’
শনিবার রাতে গুলশানে একটি হোটেলে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) ৮ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আরও বলেন, যদিও গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকারের সদিচ্ছা কিংবা সামর্থ্য নিয়ে ইতোমধ্যে হয়ত জনমনে কিছুটা হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। তবুও গণতন্ত্রের পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের ভোটে, জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠার স্বার্থে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি সমর্থন এখনো অব্যাহত রেখেছে।
তারেক রহমান বলেছেন, বিএনপিসহ বাংলাদেশের পক্ষের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলো শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকারের কর্মপরিকল্পনার রোডম্যাপ ঘোষণার আহ্বান জানিয়ে আসছে।
তিনি আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের চিন্তা এবং কর্মপরিকল্পনা সম্পর্কে জনগণ অন্ধকারে থাকায় দেশে রাজনৈতিক অঙ্গনে হয়তবা অস্থিরতা বাড়ছে।
তিনি বলেন, বিএনপি শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকারের কর্মপরিকল্পনার রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানিয়ে আসছে। কিন্তু সরকার সেই আহ্বানে সেভাবে সাড়া দেয়নি। বরং সরকার জাতীয় নির্বাচন সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ সুকৌশলে অল্প ও বেশি সংস্কার এই ধরনের অভিনব বেড়াজালে আটকে দিয়েছে। সরকারের চিন্তা ও কর্মপরিকল্পনা সম্পর্কে জনগণ অন্ধকারে থাকায় জনমনে অস্থিতিরতা বাড়ছে। বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ রাজপথে জড়ো হচ্ছে। মাত্র ১০ মাসের মাথায় সরকার ভেতরে ও বাইরেও এক ধরনের অস্থিরতা দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। সরকার জনগণের ভাষা, আশা-আকাঙ্ক্ষা বুঝতে ব্যর্থ হলে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়তে থাকবে। আমরা মনে করি, এ ধরনের অস্থিরতা বাড়তে থাকলে সরকারের পক্ষে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে।
অন্তর্বর্তী সরকারকে তাদের সক্ষমতা যাচাইয়ের আহ্বান জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের দলগুলো এখনো সরকারের সক্ষমতা নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করেনি। তবে আমরা চুপ থাকলেও জনগণ এরই মধ্যে সরকারের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে, বিভিন্ন ধরনের কথা বলছে।
জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের ওপর ভিত্তি করে সরকার গঠিত হয়েছে উল্লেখ করে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, অথচ জুলাই আগস্টে কতজন শহীদ হয়েছেন, কতজন আহত হয়েছেন তা গত ১০ মাসেও সরকার শহীদ ও আহতের সংখ্যা ও তালিকা চূড়ান্ত করতে পারেনি।
তারেক রহমান বলেন, সরকার কি হতাহতের ব্যাপারে উদাসীন, নাকি ক্ষমতার মোহে আচ্ছন্ন? দেশের বহু মানুষের জিজ্ঞাসা। জুলাই হতাহতদের তালিকার চেয়ে করিডোর দেওয়া বা বন্দর বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়াকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে সরকার বলে মন্তব্য করেন তারেক রহমান।
তারেক রহমান বলেন, সরকার কোনো এলিট ক্লাব বা করপোরেট প্রতিষ্ঠান নয়। সরকার অবশ্যই একটা রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান এবং দেশের নাগরিকদের সরাসরি অংশগ্রহণ নিশ্চিত থাকতে হবে। যদি গণতান্ত্রিক শক্তিকে উপেক্ষা করে বিরাজনীতিকরণ উৎসাহিত করলে ব্যক্তি বিশেষ লাভবান হতে পারেন কিন্তু জনগণই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিরাজনীতিকরণ নয়, বরং গণতান্ত্রিক রীতিনীতি ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী করা অত্যন্ত জরুরি।