শুক্রবার

,

৯ই মে, ২০২৫

পাকিস্তান-ভারত সীমান্তে গোলাগুলি, তথ্যযুদ্ধে গণমাধ্যম

নিজস্ব প্রতিবেদক
ছবি: সংগৃহীত

ভারত ও পাকিস্তান উভয় সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্টে গোলাবর্ষণ চলছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস জানিয়েছে, শুক্রবার সন্ধ্যায় জম্মু ও কাশ্মীরের উরি এবং পুঞ্চে পাকিস্তানি সেনারা গোলাবর্ষণ শুরু করে। এতে ভারী কামান ও গোলা ব্যবহার করা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন ভারতীয় কর্মকর্তা।

পাকিস্তানের এ হামলার জবাবে ভারতও পাল্টা হামলা চালাচ্ছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। এখন পর্যন্ত পাকিস্তানের গোলায় ১৬ ভারতীয় নিহত হয়েছে বলেও দাবি করেছে সংবাদমাধ্যমটি।

এর আগে শুক্রবার ভারত জানায়, বৃহস্পতিবার পাকিস্তান ৩০০ থেকে ৪০০ ড্রোন দিয়ে জম্মু-কাশ্মীরসহ বিভিন্ন জায়গায় হামলা চালিয়েছে, যা সফলভাবে প্রতিহত করা হয়েছে বলে দাবি করেছে তারা। তবে পাকিস্তান দাবি করেছে, তারা ভারতে কোনো হামলা চালায়নি।

এদিকে কূটনীতিকে কাজে লাগিয়ে ভারতের সঙ্গে উত্তেজনা বন্ধ হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে পাকিস্তান।

কিন্তু কূটনীতি ব্যর্থ হলে ভারতে পাল্টা হামলা চালানো হবে বলে জানিয়েছেন পাকিস্তানের এক কর্মকর্তা। উল্লেখ্য, পারমাণবিক শক্তিধর দুই দেশের উত্তেজনা প্রশমনে আমেরিকা, সৌদি আরব এবং অন্যান্য দেশ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

ভারত ও পাকিস্তানের নিরাপত্তা উপদেষ্টা পর্যায়ে বুধবার থেকে হটলাইন চালুর পর বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে। তবে বিস্ফোরকবাহী ড্রোন হামলা বেড়ে গেছে।

পাকিস্তান সরকারের সূত্র জানিয়েছে, গতকাল ভোরে ভারত পাকিস্তানে আরেকটি ড্রোন হামলা চালিয়েছে।
এদিকে নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর উভয় দেশের বাসিন্দারা ‘বড় ধরনের মানসিক চাপে’ রয়েছে মর্মে সিএনএন এক প্রতিবেদনে দাবি করেছে। ভারতের চাকোঠি সেক্টরের একটি গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা মুখতার কুরেশি সিএনএনকে বলেন, ‘সারা রাত গোলাগুলি অব্যাহত রয়েছে। আমাদের এলাকা বসবাসের অনুপযোগী। নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর মানুষ চরম উত্তেজনার মধ্যে রয়েছে।’

উভয় দেশ একে অন্যের ড্রোন ভূপাতিত করার দাবিও করছে। তবে কেউ হতাহতের দাবি করেনি।

ভারতের হামলার পর প্রতিশোধ নেওয়ার হুমকি দিলেও পাকিস্তান সীমান্তে গোলাবর্ষণ ছাড়া এখন পর্যন্ত বড় ধরনের সামরিক পদক্ষেপ নেয়নি। তবে গত বৃহস্পতিবার রাতে ভারত দাবি করেছে, কাশ্মীরের জম্মু ও উদামপুরে এবং পাঞ্জাবে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ ও ড্রোন পাঠিয়ে হামলা চালিয়েছে পাকিস্তান। সংঘর্ষের পর দুই পক্ষই নিজেদের বিভিন্ন পদক্ষেপের ভিত্তিতে বিজয়ী দাবি করেছে। তবে বৈরিতা ঠিকই বাড়ছে।

পাকিস্তান ও ভারত প্রতিবেশী দুই দেশের যুদ্ধের মধ্য দিয়ে আরেকটি যুদ্ধ শুরু হয়েছে, আর তা হলো তথ্য নিয়ে। প্রতিযোগিতামূলক সংবাদ ব্রিফিং, ভিন্ন ভিন্ন দাবি এবং পরস্পরবিরোধী বর্ণনায় এক দেশ অন্য দেশকে পেছনে ফেলতে পক্ষপাতমূলক সংবাদ পরিবেশন করছে বলে উভয় পক্ষ থেকে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।

হামলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই উভয় পক্ষ থেকে পাল্টাপাল্টি দাবি আসতে শুরু করে, যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। উভয় দেশই চায় নিজেদের পক্ষে জনমত গড়তে।

উদাহরণ হিসেবে পাকিস্তান বলেছে, তারা পাঁচটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে। ভারত এখনো এ দাবির আনুষ্ঠানিক জবাব দেয়নি।

এক গবেষক বলেন, ‘এখন আন্তর্জাতিক ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সহজে প্রবেশ করা যায়। এতে এটি (তথ্যের ওপর নিয়ন্ত্রণ) কঠিন হয়ে উঠেছে। তবু যেহেতু উভয় দেশের স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সাধারণত সরকারের পছন্দসই বয়ান অনুসরণ করে, তাই সরকার সহজে জনমত নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এবং নিজের পক্ষে সমর্থন আদায় করতে পারে।’

এই তথ্যযুদ্ধের শেষ কোথায়, তা কারো জানা নেই।