পাল্টাপাল্টি নিষেধাজ্ঞার পর শুরু হয় যুদ্ধের মহড়া। এরপর শুরু হয়েছে ‘সার্জিকাল স্ট্রাইক’। বুধবার মধ্যরাতে পাকিস্তানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ভারত। এতে কমপক্ষে ৩১ জন নিহত এবং আহত হয় আরো অনেকে। জবাবে পাল্টা হামলা চালায় পাকিস্তানও। এতে ১৫ ভারতীয় নাগরিকের প্রাণহানি ও বেশ কয়েকজন আহত হয়।
পাকিস্তান সেনাবাহিনী দাবি করেছে, তারা হামলায় অংশ নেওয়া ভারতের পাঁচটি জঙ্গি বিমান ভূপাতিত করেছে। কাশ্মীরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটি ব্রিগেডের সদর দপ্তর ও তল্লাশিচৌকিও গুঁড়িয়ে দেওয়ার দাবি করেছে তারা।
পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, ভূপাতিত করা পাঁচটি ভারতীয় জঙ্গি বিমানের মধ্যে তিনটি রাফাল, একটি রুশ এসইউ-৩০ ও একটি মিগ-২৯ জঙ্গি বিমান।
দুই দেশের পাল্টাপাল্টি আক্রমণের ফলে উত্তেজনা তীব্র আকার ধারণ করেছে। এতে সরাসরি যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে পৌছেছে ভারত-পাকিস্তান।
আন্তর্জাতিক সামরিক বিশ্লেষকরা বলছেন, পরমাণু শক্তিধর দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর সাম্প্রতিক উত্তেজনা ক্রমেই যুদ্ধের দিকে এগোচ্ছে। ফলে শুধু ভারত-পাকিস্তান নয়, পুরো দক্ষিণ-এশিয়া পড়তে যাচ্ছে ভয়াবহ ঝুঁকির মধ্যে।
বুধবার রাতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলাকে ২০১৯ সালের তুলনায় বড় পরিসরের উল্লেখ করে বিশ্লেষকরা সতর্ক করেন, মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীর অঞ্চল নিয়ে দক্ষিণ এশীয় উপমহাদেশে কয়েক দশক ধরে চলমান সংঘাত আরো তীব্র হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে ট্রাম্প প্রশাসনসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় নয়াদিল্লি ও ইসলামাবাদকে সংযত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের হামলাকে ‘হতাশাজনক’ বলেছেন। শিগগিরই এই সংকটের সমাধান হবে বলে আশাও প্রকাশ করেছেন তিনি। সংঘাতপূর্ণ এই পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ বিশ্ব নিতে পারবে না বলে সতর্ক করেছেন তিনি। উভয় পক্ষকে সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব।
হতাশা ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে চীন, জাপান, ফ্রান্স ও রাশিয়াও।
ভারতের সশস্ত্র বাহিনী এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, পাকিস্তানের ৯টি স্থান লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে তারা। তবে কোনো সামরিক স্থাপনাকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়নি। পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর দাবি, ছয়টি স্থানে ২৪টি হামলা চালিয়েছে ভারত। এগুলো হলো- পাকিস্তান ভূখণ্ডের পূর্ব আহমেদপুর, মুরিদকে ও শিয়ালকোট এবং পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের কোটলি, বাগ ও মুজাফ্ফরাবাদ।
পাকিস্তানের নেতারা এই হামলাকে ‘যুদ্ধের উস্কানি’ বলে নিন্দা করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ বলেছেন, এই হামলার প্রতিক্রিয়া হিসেবে তার দেশের ‘সমুচিত জবাব দেওয়ার’ অধিকার রয়েছে। পাকিস্তানের প্রধান সামরিক মুখপাত্র আহমেদ শরীফ চৌধুরী বুধবার স্থানীয় গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, পাকিস্তান পাঁচটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান গুলি করে ভূপাতিত করেছে, যার মধ্যে ফ্রান্সের তৈরি রাফায়েলও রয়েছে।
পাকিস্তানি কর্মকর্তারা একটি ভিডিও প্রকাশ করেছেন। সেখানে দেখা যায়, একটি যুদ্ধবিমানের ধ্বংসাবশেষ থেকে ধোঁয়া উঠছে। কর্মকর্তারা দাবি করেন, এটি বিধ্বস্ত বিমানগুলোর একটি। তবে বিষয়টি স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া ভারত সরকারের তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়াও জানা যায়নি।
দুই দেশের সংঘাতে সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী দুপক্ষেরই বেসামরিক নাগরিকেরা। আতঙ্কিত দুদেশের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোর বাসিন্দারা।
গতকালের হামলার পর তাদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা আরও বেড়েছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কাশ্মীর হত্যাকাণ্ডের পর থেকে বড় যুদ্ধের আশঙ্কা করছিল সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দারা। আগে থেকে তাই অতিরিক্ত খাবার মজুত করে রাখছিল তারা। এমনকি বাংকারও তৈরি করে রেখেছে কেউ কেউ।
মধ্যরাতে এই হামলার পর কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখায় দুপক্ষের সেনাদের মধ্যে শুরু হয় ব্যাপক গোলাগুলি। ভারতের কুপওয়ারা, পুঞ্চ ও রাজৌরি জেলার অনেক গ্রামে আঘাত হানে মর্টার শেল। নিরাপত্তাজনিত শঙ্কায় বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে বাধ্য হচ্ছে অঞ্চলগুলোর বাসিন্দারা।
এ পরিস্থিতিতে ভারত ও পাকিস্তানে প্রায় সাড়ে ৫০০ ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে।
ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের ভারতের জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক প্রবীণ দোন্তি বলেছেন, ‘২০১৯ সালের সংকটকেও ছাড়িয়ে গেছে ভারত-পাকিস্তান চলমান উত্তেজনা। দুই দেশের মানুষদের মধ্যে আবেগ এখন তুঙ্গে, কিন্তু এই আবেগ সংঘাতকে কেবল আরও ঘনীভূত করবে। যার পরিণাম ভোগ করতে হবে সাধারণ মানুষকে। দুই পক্ষেরই উচিত তাৎক্ষণিকভাবে হামলা বন্ধ করে কূটনৈতিক সমাধানের পথ খোঁজা।’