সম্প্রতি কাতার সফরে গিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশটির আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার সঙ্গে দীর্ঘ সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। ভিডিও সাক্ষাৎকারে জুলাই বিপ্লব, সাবেক স্বৈরাচার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে পালিয়ে যাওয়া, সাবেক সরকারের দুর্নীতিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিস্তারিত কথা বলেছেন তিনি।
রবিবার ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এই ভিডিও সাক্ষাৎকার আল জাজিরায় প্রকাশ করা হয়েছে।
এ সময় প্রধান উপদেষ্টা পতিত সরকারের নেতাকর্মীদের বিচার প্রক্রিয়া নিয়েও কথা বলেন। এছাড়া তিনি বাংলাদেশের নির্বাচন, অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার, বিভিন্ন ইস্যুতে রাজনৈতিক দলের মতামত নিয়ে কথা বলেন। আমেরিকার ও চীনসহ বিশ্বের সব দেশের সঙ্গেই বাংলাদেশের সুসম্পর্ক বজায় আছে বলেও জানান প্রধান উপদেষ্টা।
সাক্ষাৎকারে আল জাজিরার সাংবাদিক নিয়েভ বার্কার শেখ হাসিনাকে নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে বিভিন্ন প্রশ্ন করেন। তখন তার বিভিন্ন বক্তব্য ও বিবৃতি দেওয়ার বিষয়টি উঠে আসে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তিনি বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। সেখানে শেখ হাসিনাকে ‘চুপ’ রাখতে বলেছিলেন তিনি। কিন্তু জবাবে মোদি বলেছিলেন তিনি এটি পারবেন না।
কারণ ভারতে সবাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে। এটি সবার জন্য উন্মুক্ত। অর্থাৎ শেখ হাসিনা সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে কিছু বললে সেটি তিনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না।
আল জাজিরার সাংবাদিক বলেন, ‘শেখ হাসিনা দাবি করেন তিনি এখনো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।
তিনি ভারত থেকে এসব বিবৃতি দিচ্ছেন। অন্তর্বর্তী সরকার ভারতে তার অবস্থানকে কীভাবে দেখে?’
জবাবে ড. ইউনূস বলেন, ‘ব্যাংককে বিমসটেক সম্মেলন হয়েছিল। যেখানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিসহ বিমসটেকভুক্ত দেশের সব সরকারপ্রধান এসেছিলেন। তার সঙ্গে আমার কথা হয় এবং আমি তাকে স্পষ্ট করি, ঠিক আছে, যদি শেখ হাসিনাকে আপনি রাখতে চান। তাহলে এ বিষয়ে আপনার সঙ্গে আমি কিছু করতে পারব না।
কিন্তু অবশ্যই তিনি যখন সেখানে থাকবেন, তার কথা বলা উচিত হবে না। কারণ তার বক্তব্য আমাদের জন্য সমস্যার সৃষ্টি করে। তিনি বক্তব্য দিয়ে বাংলাদেশের মানুষকে উত্তেজিত করেন। আর এজন্য আমাদের ভোগান্তি পোহাতে হয়।’
নিয়েভ বার্কার তখন জিজ্ঞেস করেন ‘মোদি কী বলেছিলেন?’ জবাবে ড. ইউনূস বলেন, ‘তিনি বলেছিলেন, ভারত হলো এমন দেশ যেখানে সামাজিক মাধ্যম সবার জন্য উন্মুক্ত। আমি এটি নিয়ন্ত্রণ করতে পারব না।’
আল জাজিরাকে তিনি জানান, পতিত আওয়ামী লীগ সরকার গণহত্যা, গুম, খুনসহ যেসব অপরাধ ঘটিয়েছে তার প্রমাণ উঠে এসেছে জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থার প্রতিবেদনে।
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, সংস্কার অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম এজেন্ডা। ড. ইউনূস জানান, বিভিন্ন খাতের সংস্কারগুলো জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতেই চূড়ান্ত করা হবে।
তিনি বলেন, ‘নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই নির্বাচন হবে। বিশাল একটি অংশের সংস্কারের পর নির্বাচন দিলে আগামী জুনে এবং ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দিলে সংস্কারের একটি ছোট অংশ বাস্তবায়ন করা হবে। বাকি সংস্কার নির্বাচনের পরে হবে।
এ সময় প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, আগামীর বাংলাদেশের কোনো ফ্যাসিস্টের উপস্থিতি দেখতে চান না তিনি।