আমেরিকায় পোশাক রপ্তানিতে যখন শঙ্কা তৈরি হয়েছে, তখন অপ্রচলিত বাজারে রপ্তানি আয়ে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি আশার সঞ্চার করে। ইউরোপের বাজারে ৯ মাসে পোশাক খাতে আয় হয়েছে ৩ হাজার ২৫ কোটি ডলার; প্রবৃদ্ধি ১১ শতাংশ। একক বড় বাজার আমেরিকা থেকে আয় এসেছে ৫৭৩ কোটি ৮১ লাখ ডলার।
সংশ্লিষ্টদের মতে, বাণিজ্য যুদ্ধের শঙ্কা থেকে সম্ভাবনা তৈরি করছে। ফলে প্রচলিত বাজারের পাশাপাশি অপ্রচলিত বাজারগুলোতে ইতিবাচক রপ্তানির ধারা অব্যাহত রয়েছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) ও তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর পরিসংখ্যানে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
সম্প্রতি ইপিবি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-মার্চ মাসের রপ্তানি পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যায়, গত ৯ মাসে তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে মোট আয় হয়েছে তিন হাজার ২৫ কোটি ডলার। এ সময় প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ১১ শতাংশ। এর আগের অর্থবছরের একই সময়ের আয় ছিল দুই হাজার ৭২৮ কোটি ৮৭ লাখ ডলার।
পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, দেশের পোশাক রপ্তানি আয়ের প্রায় ৫০ শতাংশের বাজার ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এই বাজার থেকে আয় হয়েছে এক হাজার ৫০৭ কোটি ডলার। আর প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১১.৩১ শতাংশ। একক বড় বাজার আমেরিকা থেকে আয় এসেছে ৫৭৩ কোটি ৮১ লাখ ডলার।
এই বাজারের পোশাক খাতের রপ্তানি হিস্যা প্রায় ১৯ শতাংশ। অন্যতম আরেক বড় বাজার কানাডা থেকে এই সময় আয় হয়েছে ৯৬ কোটি ৩৮ লাখ ডলার। এ বাজারে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৫.৬৬ শতাংশ। এই বাজারে দেশের পোশাক রপ্তানি আয়ের হিস্যা ৩.১৯ শতাংশ। এ ছাড়া যুক্তরাজ্যে থেকে এ সময় আয় হয়েছে ৩৩৬ কোটি ডলার, যা দেশের মোট পোশাক রপ্তানির ১১ শতাংশের বেশি।
প্রবৃদ্ধির পর্যালোচনায় দেখা যায়, ইইউতে তৈরি পোশাক রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে ১১.৩১ শতাংশ বেড়েছে, যেখানে আমেরিকা ১৭.২৩ শতাংশ এবং কানাডায় ১৫.৬৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে যুক্তরাজ্যে পোশাক রপ্তানি তুলনামূলক কম। এ সময় দেশটিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪.১৪ শতাংশ। তথ্য অনুসারে দেখা যায়, ইইউর বাজারগুলোর মধ্যে জার্মানি গুরুত্বপূর্ণ বাজার হয়ে উঠেছে। এই বাজারে রপ্তানি হয়েছে ৩৮০ কোটি ডলার।
ইউরোপের অন্য বাজারগুলোর মধ্যে স্পেন থেকে এ সময় আয় এসেছে ২৬৫ কোটি ডলার, ফ্রান্স থেকে ১৬৫ কোটি ডলার, ইতালি থেকে ১১৭ কোটি ডলার, পোল্যান্ড থেকে ১২৬ কোটি ডলার এবং নেদারল্যান্ডস থেকে ১৬১ কোটি ডলারের আয় এসেছে। জার্মানির বাজারে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১০.৭২ শতাংশ, ফ্রান্সে ১০.৭৫ শতাংশ, নেদারল্যান্ডসে ২৩.১৫ শতাংশ, পোল্যান্ডে ১০.৩২ শতাংশ, ডেনমার্কে ১২.৮০ শতাংশ এবং সুইডেনে হয়েছে ১৯.৯৬ শতাংশ।
ইপিবির তথ্য অনুসারে ইউরোপ এবং আমেরিকার মতো বড় বাজারগুলো ছাড়া অপ্রচলিত বাজারগুলোতেও এ সময় সামগ্রিকভাবে ভালো প্রবৃদ্ধি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করেন, এসব বাজারে আরো ভালো করার সম্ভাবনা রয়েছে। গত ৯ মাসে এসব বাজারে প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ৭ শতাংশ। আর মোট আয় হয়েছে ৫১২ কোটি ডলার, যা মোট রপ্তানির প্রায় ১৭ শতাংশ।
অপ্রচলিত বাজারগুলোর মধ্যে শীর্ষ বাজার জাপান থেকে আয় হয়েছে ৯৬ কোটি ডলার। এরপরে অস্ট্রেলিয়া থেকে আয় এসেছে ৬৫ কোটি ৩৬ লাখ ডলার এবং ভারত থেকে এসেছে ৫৩ কোটি ৫১ লাখ ডলার। তুরস্ক এবং মেক্সিকোর মতো দেশগুলোতেও রপ্তানি উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে, যথাক্রমে ৩৫ কোটি ৭২ লাখ ডলার এবং ২৫ কোটি ১২ লাখ ডলার। এ সময়ে ভারতে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি হয়েছে, যা ২০.৪৫ শতাংশ। এ ছাড়া জাপান ১০.০৬ শতাংশ, মেক্সিকো ২৩.৪৪ শতাংশ এবং তুরস্ক ৩২.৫৪ শতাংশ।