ভিসা অবৈধভাবে বাতিল করার অভিযোগে আমেরিকাজুড়ে ১৩০ জনের বেশি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ফেডারেল আদালতে ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। এতে দেশটিতে তাদের আইনি অবস্থান হুমকির মুখে পড়েছে বলে আদালতের নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
শিক্ষার্থীরা মামলার অভিযোগে বলেছে, ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) সংস্থা হঠাৎ করেই ও বেআইনিভাবে সরকারের স্টুডেন্ট অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ ভিজিটর ইনফরমেশন সিস্টেম (সেভিস) থেকে তাদের নাম মুছে দিয়েছে। এর ফলে তারা গ্রেপ্তার, আটক কিংবা দেশ থেকে বহিষ্কারের ঝুঁকিতে পড়েছেন।
গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে অনেক শিক্ষার্থী জানিয়েছে, আমেরিকাজুড়ে বিভিন্ন ক্যাম্পাসে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা হঠাৎ করেই জানতে পারছেন, তাদের ভিসা বাতিল করা হয়েছে—প্রায়ই খুব সামান্য কারণে বা কোনো কারণ ছাড়াই।
কেউ কেউ অভিযোগের ভিত্তিতে ছোটখাটো ট্রাফিক নিয়ম লঙ্ঘনের কথা বলেছেন। জর্জিয়া ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজিতে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পিএইচডি শিক্ষার্থী জন ডো চীনের নাগরিক।
জনকে তার বিশ্ববিদ্যালয় জানায়, তার ভিসা বাতিল হয়েছে একটি ফৌজদারি রেকর্ড যাচাইয়ের পর, কিন্তু কী কারণে তা জানানো হয়নি। ওই শিক্ষার্থীর ধারণা, হয়তো পুরনো কোনো ট্রাফিক মামলা ছিল, যেটি অবশ্য মীমাংসা হয়ে গেছে। মামলার নথি অনুযায়ী, তার আর কোনো অপরাধমূলক রেকর্ড নেই।
এদিকে নিউইয়র্ক ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির এক ভারতীয় শিক্ষার্থী জানান, তার বিরুদ্ধে দোকানপাট থেকে জিনিস চুরির অভিযোগ আনা হলেও তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছেন এবং মামলাটি খারিজ হয়ে গেছে।
মামলায় আরও বলা হয়েছে, ‘গত এক সপ্তাহে দেশজুড়ে ক্যাম্পাসগুলোতে ভিসা বাতিল ও সেভিস থেকে নাম প্রত্যাহারের ঘটনাগুলো ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। সেভিস থেকে শিক্ষার্থীদের বাদ দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে এমন এক প্রেক্ষাপটে, যখন ফেডারেল সরকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রতি নানা দাবি জানাচ্ছে এবং কোটি কোটি ডলারের সরকারি অনুদান বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে।’
ভিসা বাতিলের মামলা প্রথম ১১ এপ্রিল জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যে ১৭ জন শিক্ষার্থীর পক্ষ থেকে দায়ের করা হয়। তার পর থেকে আরো ১১৬ জন শিক্ষার্থী এতে যোগ দিয়েছেন।
জর্জিয়ার মামলায় আসামি হিসেবে নাম উল্লেখ করা হয়েছে আমেরিকার অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি, হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সেক্রেটারি ক্রিস্টি নোএম ও আইসিইর ভারপ্রাপ্ত পরিচালক টড লায়ন্সকে। মামলায় বাতিল হওয়া ভিসাগুলো পুনর্বহালের আবেদনও জানানো হয়েছে।
মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, শিক্ষার্থীদের পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি ‘প্রতিশোধের আশঙ্কায়’। তবে প্রাথমিক ১৭টি মামলার সারাংশে দেখা যায়, ভিসা বাতিলের ঘটনা ছিল বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অস্পষ্ট এবং যেন হঠাৎ করেই হয়েছে, যেখানে প্রত্যেকে তাদের মনে হওয়া সম্ভাব্য কারণ তুলে ধরেছেন।
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন যখন অভিবাসননীতিতে কঠোর অবস্থান নিচ্ছে, বিশেষ করে বিদেশি শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে, তখন এই মামলাটি উঠে এলো। সরকারিভাবে পরিচালিত ডেটাবেস থেকে শিক্ষার্থীদের নাম বাদ পড়লে ভবিষ্যতে তারা আমেরিকায় পুনরায় প্রবেশের অধিকার হারাতে পারেন।