সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে লন্ডনে সাক্ষাৎ করেছেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান ও নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। রবিবার স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় তারেক রহমানের লন্ডনের বাসায় এই সাক্ষাৎ হয়েছে বলে জানা গেছে। এ সময় তারেক রহমানও উপস্থিত ছিলেন।
সোমবার সকালে দেশে ফিরেছেন জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান। তিনি গণমাধ্যমকে বিএনপির চেয়ারপারসনের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাতের কথা জানান। তবে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের সঙ্গে কী বিষয়ে আলোচনা হয়েছে, তা নিয়ে ডা. শফিক এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটি একাধিক নেতার কাছে জানতে চাইলেও তাঁরা কিছু বলতে চাননি।
খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়ে জামায়াত আমির জানান, বেগম জিয়ার সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হয়েছে।
তাঁরা একসঙ্গে অনেক দিন কাজ করেছেন। বেগম জিয়া অসুস্থ। তাঁর খোঁজখবর নেওয়া নৈতিক দায়িত্ব। বহুদিন পর দেখা হয়েছে। তাঁর জন্য দোয়া করেছি, তাঁর কাছে দোয়া চেয়েছি।
তারেক রহমানের সঙ্গে কথা প্রসঙ্গে বলেন, দুজন মানুষ একসঙ্গে হলে তো অনেক কথাই হয়। অনেক কথাই হয়েছে। তবে তিনি এর বেশি কিছু আর বলতে চাননি।
ধারণা করা হচ্ছে, স্বাভাবিকভাবেই বৈঠকে আগামী নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। নির্বাচন কবে হবে, তা নিয়ে দুই দলের মধ্যে যে দূরত্ব এই বৈঠকের মাধ্যমে তা নিরসন হতে পারে।
নির্বাচনের আগে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে এই বৈঠক খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। এই বৈঠকের পর দুই দলের সম্পর্ক কোন পর্যায়ে দাঁড়ায়, তাও এখন দেখার বিষয়।
লন্ডনে খালেদা জিয়ার বড় ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বাসায় আছেন খালেদা জিয়া।
তিনি সেখানে থেকে লন্ডন ক্লিনিকের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আগামী সপ্তাহে তাঁর আবার পরীক্ষা হবে। এরপর তিনি দেশে ফেরার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
প্রায় দুই সপ্তাহের সফর শেষে সোমবার সকালে জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান দেশে ফিরেছেন। আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের এখনো দেশে ফেরেননি।
জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান গত ৪ এপ্রিল ব্রাসেলস সফরে যান। এই সফরে তাঁর সঙ্গে ছিলেন দলের নায়েবে আমির আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ও আমিরের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা মাহমুদুল হাসান।
জানা গেছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদর দপ্তরে একাধিক বৈঠক ও সাক্ষাৎ কর্মসূচি ছিল জামায়াত আমিরের। সফরকালে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সাউথ এশিয়ান ককাসের এমপিদের সঙ্গে বৈঠক, ইইউয়ের ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সের সাউথ এশিয়া ডেস্কের কর্মকর্তাদের সঙ্গে পৃথক বৈঠক হয় জামায়াত প্রতিনিধিদলের।
ব্রাসেলস থেকে জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান ও নায়েবে আমির আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের লন্ডনে যান।
এদিকে খালেদা জিয়ার সঙ্গে জামায়াত আমির সাক্ষাৎ নিয়ে বিএনপির চেয়ারপারসনের সাবেক প্রেসসচিব মারুফ কামাল খান গত রাতে তাঁর ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন।
পোস্টে মারুফ কামাল লেখেন, ‘ইউরোপ সফর শেষে লন্ডন পৌঁছে সম্প্রতি জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান ও নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ আবু তাহের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে দেশে ফিরেছেন। জিয়া দম্পত্তির বড় ছেলে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বাসায় গিয়ে তারা দেখা করেন। দীর্ঘ এ সাক্ষাৎ পর্বে তারেক রহমানও উপস্থিত ছিলেন। বেগম খালেদা জিয়া এখন তার পুত্রের বাসায় থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছেন।’
তিনি আরও লেখেন, ‘বেগম জিয়ার সঙ্গে জামায়াতের দুই শীর্ষ নেতার সাক্ষাতে কী কী বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে, তা জানা যায়নি। দুই ডাক্তারের এ সাক্ষাৎ রাজনীতির রসায়নে নতুন কোনো ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে নাকি নিছক সৌজন্য সাক্ষাৎ হয়েই থাকবে, তা বুঝতে হলে আমাদের চোখ রাখতে হবে সামনের দিকে।’
সেনাপ্রধানের বিষয়ে মারুফ কামাল বলেন, ‘বেগম জিয়া উন্নত চিকিৎসার জন্য বিলেত যাওয়ার আগে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানও সস্ত্রীক তার বাসায় গিয়ে দেখা করেছিলেন। সে সাক্ষাৎকার নিয়েও বিশদ কিছু জানা যায়নি।’