রবিবার

,

২৭শে এপ্রিল, ২০২৫

বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করল ভারত

নিজস্ব প্রতিবেদক
ছবি: সংগৃহীত

ভারতের কেন্দ্রীয় শুল্ক বোর্ড সিবিআইসি বাংলাদেশকে দেওয়া ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করেছে। ফলে বৈদেশিক রপ্তানিতে ভারতের স্থল ও বিমানবন্দর আর ব্যবহার করতে পারবে না বাংলাদেশ। ভারতীয় গণমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করেছে।

খবরে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার জারি করা এক বিজ্ঞপ্তিতে সিবিআইসি জানায়, ২০২০ সালের ২৯ জুনে বাংলাদেশকে ট্রানজিট সুবিধা দিয়ে যে সার্কুলার প্রকাশ করা হয়েছিল- তা বাতিল করা হয়েছে। ​

২০২০ সালের সার্কুলারের মাধ্যমে বাংলাদেশ তার রপ্তানি পণ্য ভারতের স্থল কাস্টমস স্টেশন এলসিএস ব্যবহার করে ভারতের সমুদ্রবন্দর ও বিমানবন্দর হয়ে ভুটান, নেপাল ও মায়ানমারের মতো তৃতীয় দেশে পাঠাতে পারত। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বলছে, এর আওতায় বাংলাদেশি রপ্তানিকারকদের খরচ ও সময় অনেক কমে আসত। ​

ভারতীয় গার্মেন্টস খাতের রপ্তানিকারকরা দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশের এই সুবিধা বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। তারা অভিযোগ করছিলেন, প্রতিদিন প্রায় ২০-৩০টি ট্রাক বাংলাদেশ থেকে দিল্লি বিমানবন্দর কার্গো টার্মিনালে প্রবেশ করে, যার ফলে একদিকে যেমন কার্গো প্রক্রিয়ায় দেরি হয় তেমনি অপরদিকে বিমান সংস্থাগুলো অতিরিক্ত ভাড়া নেয়। এর দরুণ ভারতীয় পণ্যের প্রতিযোগিতা ক্ষমতা কমে যাচ্ছে ও ভারতীয় পণ্যের রপ্তানি ব্যাহত হয়।

প্রতিবেদনে ট্রানজিট সুবিধা বাতিলের স্পষ্ট কোনো কারণ উল্লেখ করা হয়নি। তবে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস মনে করছে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সাম্প্রতিক চীন সফরে দেওয়া কিছু মন্তব্য ভারতের উদ্বেগের কারণ হতে পারে।

প্রধান উপদেষ্টা চীনা ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে দেওয়া বক্তব্যে সে সময় বলেছিলেন, “ভারতের উত্তর-পূর্বের সাতটি রাজ্য ভূমিবেষ্টিত। আমরা এই অঞ্চলের জন্য সমুদ্রের একমাত্র অভিভাবক। এটি একটি বিশাল সুযোগের দ্বার উন্মোচিত করেছে। এটি চীনা অর্থনীতির একটি সম্প্রসারণ হয়ে উঠতে পারে।”

এই মন্তব্য ভারতের কূটনৈতিক মহলে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। ​

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস লিখেছে, নয়াদিল্লির সঙ্গে যখন ঢাকার সম্পর্কের অবস্থা ভঙ্গুর- তখন চীনকে নতুন কৌশলগত অংশীদার হিসেবে চিত্রিত করাও ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ককে জটিল করে তুলেছে।

ট্রানজিট সুবিধা বাতিলের ফলে বাংলাদেশের রপ্তানিকারকদের খরচ ও সময় বৃদ্ধি পাবে। বিশেষ করে ভুটান ও নেপালের মতো ভূমিবেষ্টিত দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যে প্রভাব পড়বে। ফলে বাংলাদেশের রপ্তানি কার্যক্রমে জটিলতা সৃষ্টি হবে।

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) নিয়ম অনুযায়ী, সদস্য দেশগুলোকে ভূমিবেষ্টিত দেশগুলোর জন্য অবাধ ট্রানজিট সুবিধা নিশ্চিত করতে হয়। ১৯৯৪ সালে সংস্থাটির জারি করা জেনারেল অ্যাগ্রিমেন্ট অন ট্যারিফস অ্যান্ড ট্রেড ( জিএটিটি) এর অনুচ্ছেদ পাঁচ অনুসারে, সব সদস্যকে স্থলবেষ্টিত দেশগুলোতে পণ্য পরিবহনের জন্য ট্রানজিট প্রদান করতে হবে। এতে কোনো নির্দিষ্ট সীমা দেওয়া যাবে না এবং পরিবহন শুল্কের আওতায় ফেলা যাবে না।

ফলে ভারতের এই সিদ্ধান্ত নেপাল ও ভুটানের ক্ষেত্রে ডব্লিওটিও’র নিয়মাবলীর সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সিদ্ধান্ত ভারতীয় রপ্তানিকারকদের জন্য তাৎক্ষণিক সুবিধা হলেও দীর্ঘমেয়াদে আঞ্চলিক বাণিজ্য ও পরিবহন ব্যবস্থার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।