বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুল্ক আরোপ করায় বৈশ্বিক বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। ছোট-বড় অনেক দেশের শেয়ারবাজারে ধস নেমেছে। ট্রাম্পের নিজের দেশেও শেয়ারবাজারে সূচকের পতন ঘটেছে। এ মুহূর্তে বিশ্ব অর্থনীতিতে টালমাটাল অবস্থা বিরাজ করছে।
ট্রাম্প শুরুতে চীনা পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিলেন। এরপর রেসিপ্রোকাল শুল্কের আওতায় আরও ৩৪ শতাংশ শুল্ক বসান। সর্বশেষ চীনের ওপর আরও ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের যে হুমকি ট্রাম্প দিয়েছেন তাতে বৈশ্বিক মন্দার আশঙ্কাকে বাড়িয়ে দিচ্ছে।
এমন পরিপ্রেক্ষিতে শুল্ক প্রত্যাহারের জন্য বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশ আহ্বান জানালেও ট্রাম্প বলেছেন সে রকম কোনো পরিকল্পনা তার নেই।
হোয়াইট হাউসে স্থানীয় সময় সোমবার সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে শুল্ক স্থগিত করবেন কি না- এমন প্রশ্নের উত্তরে ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা এমন কিছু ভাবছি না। আপাতত শুল্ক স্থগিতের কোনো পরিকল্পনা আমাদের নেই। অনেক দেশ আছে যারা আমাদের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তির জন্য আলোচনা করতে আসছে এবং তারা ন্যায্য চুক্তি করবে এবং কিছু ক্ষেত্রে, তারা প্রচুর শুল্ক দেবে। আমরা ন্যায্য বাণিজ্যিক সম্পর্ক চাই।’
এর আগে তিনি জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবার সঙ্গে টেলিফোনে বৈঠক করেন। পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে সেই বৈঠকের প্রসঙ্গ তুলে ট্রাম্প বলেন, ‘জাপানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছি। তাকে মাত্র একটি কথা বলেছি যে, আমেরিকার পণ্যের জন্য জাপানকে উন্মুক্ত করতে হবে। কারণ বর্তমানে জাপানে আমেরিকার গাড়ি রপ্তানির হার শূন্যের কাছাকাছি অথচ আমেরিকায় প্রতিবছর লাখ লাখ গাড়ি রপ্তানি করে জাপান।’
গত সপ্তাহে ট্রাম্প চীনা পণ্যে শুল্ক আরোপ করেন। চীনও পাল্টা ঘোষণা দেয়। এরপর ট্রাম্প হুমকি দেয় আমেরিকার পণ্যের ওপর চাপিয়ে দেওয়া শুল্ক প্রত্যাহার করা না হলে চীন থেকে আসা পণ্যের ওপর তিনি অতিরিক্ত ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবেন। এই হুমকির পর দুই পরাশক্তির মধ্যে সরাসরি বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে।
চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেন, আমেরিকা যদি নিজের পথে হাঁটতেই থাকে, চীন শেষ পর্যন্ত লড়বে। তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের হুমকি আবারও আমেরিকার ব্ল্যাকমেইলিংয়ের প্রকৃতি উন্মোচন করল।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমেরিকার যদি শুল্কব্যবস্থা আরও বাড়ায়, চীনও উপযুক্ত প্রতিক্রিয়া জানাবে এবং নিজের অধিকার ও স্বার্থ রক্ষা করবে।’
তবে চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অবশ্য জানিয়েছে, তারা আমেরিকার সঙ্গে ‘সংলাপে’ আগ্রহী এবং মনে করে, ‘বাণিজ্যযুদ্ধে কারও জয় হয় না।
ট্রাম্প আমেরিকার নাগরিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘দুর্বল হবেন না! বোকা হবেন না!’ তিনি বিশ্বাস করেন, শুল্কের কারণে বিদেশি কোম্পানিগুলো আমেরিকায় ফিরে আসবে এবং দেশীয় শিল্প পুনরুজ্জীবিত হবে। তবে অধিকাংশ অর্থনীতিবিদ ট্রাম্পের এই ধারণাকে সমর্থন করেন না।
জেপি মরগান চেজের সিইও জেমি ডাইমন সতর্ক করে বলেন, ‘মুদ্রাস্ফীতি বাড়বে এবং শুল্কের কারণে মন্দা দেখা না গেলেও প্রবৃদ্ধি ধীর হবে। রিপাবলিকান সিনেটর টেড ক্রুজও জানান, সাধারণ ভোটারদের ওপর এর প্রভাব নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন।’ তিনি বলেন, মন্দা শুরু হলে আগামী বছরের মধ্যবর্তী নির্বাচনে রিপাবলিকানদের জন্য ‘রক্তস্নান’ অপেক্ষা করছে।