শনিবার

,

২২শে মার্চ, ২০২৫

আ. লীগ সরকারের মদদে গণঅভ্যুত্থানে পরিকল্পিত হত্যা : জেনেভায় ভলকার তুর্ক

নিজস্ব প্রতিবেদক
ছবি: সংগৃহীত

আওয়ামী লীগ সরকারের মদদে গণঅভ্যুত্থানে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড হয়েছে বলে দাবি করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক। জাতিসংঘ মৃত্যুদণ্ডের পক্ষে নয় মন্তব্য করে এ সময় তিনি বলেন, তবে বিচার হতে হবে।

বুধবার বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬টায় সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় জুলাই-আগস্টে বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নির্যাতনের তথ্যানুসন্ধান প্রতিবেদন তুলে ধরে তিনি এ দাবি করেন।

এ সময় সদস্য রাষ্ট্রগুলোর কাছে তুলে ধরা প্রতিবেদনে তুর্ক বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার ও জবাবদিহি নিশ্চিত করবে।’

জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের ঘটনা তদন্তে জাতিসংঘ কীভাবে তথ্য সংগ্রহ করেছে তা-ও উল্লেখ করেন ভলকার তুর্ক।

ভলকার তুর্ক আশা প্রকাশ করেন, তাদের সাম্প্রতিক স্বাধীন তথ্য অনুসন্ধান প্রতিবেদন বাংলাদেশের প্রকৃত ও বাস্তবচিত্র তুলে ধরায় এটি জবাবদিহি, ক্ষতিপূরণ এবং এ অবস্থা থেকে উত্তরণ ও সংস্কারকে সমর্থন করবে।

তিনি বলেন, ফৌজদারি মামলায় যথাযথ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা ও সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক সহিংসতার তদন্ত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গত বছর বাংলাদেশ সহিংসতায় এক ব্যাপক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়। তৎকালীন সরকার ছাত্র আন্দোলনকে ‘নৃশংসভাবে দমনে’ মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে।

তিনি আরো বলেন, দেশ এখন একটি নতুন ভবিষ্যতের পরিকল্পনা করছে।

প্রতিবেদন উপস্থাপনকালে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল ও জুলাই আন্দােলনে শহীদ মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধর বড়ভাই মীর মাহমুদুর রহমান দীপ্ত। এ সময় জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা সম্পর্কে তাদের সাম্প্রতিক স্বাধীন তথ্য অনুসন্ধান প্রতিবেদন এ ক্ষেত্রে ‘গুরুত্বপূর্ণ অবদান’ রাখবে।
তুর্ক উল্লেখ করেন, গত বছর বাংলাদেশে মানবাধিকারের দাবিতে ছাত্র আন্দোলনকে ‘বর্বরভাবে দমন’ করার সময় সহিংসতার বন্যা বয়ে যায়। এখন দেশটি একটি নতুন ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

জাতিসংঘের ইউটিউব চ্যানেলে সরাসরি সম্প্রচারিত এ অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন আর শামদানি।

উন্মুক্ত আলোচনা পর্বে আলোচকরা গুমের বিষয়টিকে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দিয়েছেন। তাঁরা বলেন, এখনো যাঁরা গুমের কারণে নিখোঁজ রয়েছেন, তাঁদের খুঁজে বের করার ব্যাপারে আরো যত্নশীল হতে হবে। তাঁরা বলেন, ভলকার তুর্কের প্রতিবেদনটিতে যেসব নির্মম নির্যাতনের কথা তুলে ধরা হয়েছে, তাতে এটা সহজেই অনুমিত হয়, তাঁরা এখনো ট্রমায় রয়েছেন।

ভলকার তুর্ক তাঁর সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের সমাপনী টানেন এভাবে—‘জুলাই নির্যাতনের প্রকৃত চিত্র ফুটিয়ে তোলার ক্ষেত্রে আমরা বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সহায়তা পেয়েছি। আমরা আশা করছি, তা প্রকৃত ঘটনা উপস্থাপনে বেশ সহায়তা করেছে।’

ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচারিত এই অনুষ্ঠানে জুলাই নির্যাতনকালে নিরাপত্তা বাহিনীর ভয়াবহ নির্যাতন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বেশ কিছু ছবি ও গ্রাফচিত্র উপস্থাপন করা হয়। ভলকার তুর্ক আশা করেন, জুলাই-আগস্টে বাংলাদেশে সংঘটিত ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সঙ্গে সম্পর্কিত মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নির্যাতনের ওপর জাতিসংঘের মানবাধিকার তথ্য অনুসন্ধান প্রতিবেদনটির সুপারিশসমূহ বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার ন্যায্যতা ও নিরপেক্ষতার সঙ্গে বাস্তবায়নে সচেষ্ট থাকবে। তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলপকালেও আমি একই আহ্বান তুলে ধরেছি।’