অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, একটি পলাতক দল দেশ ছেড়ে চলে গেছে। তারা দেশকে অস্থিতিশীল করতে সর্বাত্মক চেষ্টা করছে।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ মন্তব্য করেন। সোমবার সাক্ষাৎকারটি প্রকাশ করেছে সংবাদমাধ্যমটি।
সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের প্রায় সাত মাসে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, সংস্কার ও নির্বাচন, ছাত্র নেতৃত্বের নতুন দল গঠনসহ রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে কথা বলেছেন। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক নিয়েও কথা বলেছেন তিনি।
সাক্ষাৎকারে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, একটা পলাতক দল দেশ ছেড়ে চলে গেছে বা তাদের নেতৃত্ব চলে গেছে। তারা সর্বাত্মক চেষ্টা করছে এটাকে (দেশটাকে) আনসেটেল (অস্থিতিশীল) করার জন্য।
সম্প্রতি সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ জামান তার বক্তব্যে দেশের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেছিলেন, নিজেদের মধ্যে হানাহানি বন্ধ না করলে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হবে। এই বক্তব্যের ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এটাতো সব সময় থাকে। একটা পলাতক দল দেশ ছেড়ে চলে গেছে বা তাদের নেতৃত্ব চলে গেছে। তারা সর্বাত্মক চেষ্টা করছে এটাকে (দেশ) আনসেটেল করার জন্য। এটাতো সবসময় থ্রেট আছেই। প্রতিক্ষণেই আছে, প্রতি জায়গাতেই আছে। কাজেই এটাতো সবসময় থাকবে।
হুমকিটা আওয়ামী লীগের দিক থেকে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, অবশ্যই। এটাতো অবভিয়াস। তারা মাঝে মাঝেই ঘোষণা করছে। বক্তৃতা দিচ্ছে। এড্রেস করছে। আপনি-আমরা সবাই শুনছি। মানুষ উত্তেজিত হচ্ছে।
সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনুস আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে বলেন, অপরাধের পরিমাণ মোটেই বাড়েনি। আগের মতোই হয়েছে।’ তবে তিনি স্বীকার করেন, পুলিশ এখনও পুরোপুরি আস্থার সঙ্গে কাজ করতে পারছে না।
তিনি বলেন, প্রথম দিকে সমস্যা ছিল যে পুলিশ বাহিনী যাকে দিয়ে আমরা কাজ করাচ্ছিলাম, তারা ভয়ে রাস্তায় নামছিল না। দুইদিন আগে তারা এদেরকে (জনগণকে) গুলি করেছে। কাজেই মানুষ দেখলেই সে ভয় পায়। কাজেই তাকে ঠিক করতেই আমাদের কয়েক মাস চলে গেছে। এখন মোটামুটি ঠিক হয়ে গেছে। এখন আবার নিয়ম শৃঙ্খলার দিকে আমরা রওনা হয়েছি। কাজ করতে থাকবো।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, আমরা চেয়েছিলাম যে এখনই আমরা সংলাপটা শুরু করবো। এটাও পারি নাই। সংলাপ শুরু হতে হতেও দেরি হয়ে যাচ্ছে। যেগুলো সময়মতো আমরা করতে চেয়েছি, ওই সময়ে করতে পারিনি।
তিনি বলেন, আমরা অনেকগুলো সংস্কার কমিশন করেছি। আমাদেরকে ৯০ দিনের মধ্যে কমিশনের রিপোর্ট দেয়ার কথা। তারা দিতে পারে নাই। আমি অভিযোগ করছি না। কারণ বিশাল একটা কাজ। আরেকটু সময় চেয়েছে- এক মাস, দুই মাস। ওইটুকু একটু পিছিয়ে গেছে। এগুলো আর কী। কাজ করতে গেলে যা হয়।
অধ্যাপক ইউনূস জানান, রাজনৈতিক দলগুলোর চাওয়া অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক এখন কোন পর্যায়ে আছে, জানতে চাইলে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, খুবই ভালো। আমাদের সম্পর্কের কোনো অবনতি হয় নাই। আমি যেভাবে ব্যাখ্যা করে এসেছি আমাদের সম্পর্ক সবসময় ভালো থাকবে। এখনও ভালো আছে, ভবিষ্যতেও ভালো থাকবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্ক ভালো না থেকে উপায় নেই। আমাদের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ, আমাদের পরস্পরের ওপর নির্ভরশীলতা এত বেশি এবং ঐতিহাসিকভাবে, রাজনৈতিকভাবে, অর্থনৈতিকভাবে আমাদের এত ক্লোজ সম্পর্ক, সেটা থেকে আমরা বিচ্যুত হতে পারব না। তবে মাঝখানে কিছু কিছু দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে, আমি বলেছি মেঘ দেখা দিয়েছে। এই মেঘগুলো মোটামুটি এসেছে অপপ্রচার থেকে। এই অপপ্রচারের ফলে আমাদের সঙ্গে একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়ে গেছে। সেই ভুল বোঝাবুঝি থেকে আমরা উত্তরণের চেষ্টা করছি।
আওয়ামী লীগকে আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে না দেওয়া বা দলটির রাজনীতি নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে বিভিন্ন মহলের দাবির ব্যাপারে সরকারের ভাবনা জানতে চাইলে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমি অত ডিটেইলসে যাচ্ছি না। আমার বরাবরই পজিশন হলো যে আমরা সবাই এই দেশের নাগরিক। আমাদের এই দেশের ওপরে সমান অধিকার। আমরা সব ভাই ভাই। আমাদেরকে এই দেশেই বাঁচতে হবে। কাজেই যে মত-দল করবে, তার মতো করে, সবকিছু করবে। এই দেশ থেকে কারও অধিকার কেড়ে নেওয়ার কোনো উপায় নাই। কিন্তু যে অন্যায় করেছে, যার বিচার হওয়া উচিত, তার বিচার হতে হবে।