রবিবার

,

২৩শে মার্চ, ২০২৫

প্রতিহিংসা-প্রতিশোধ নয় আসুন, ভ্রাতৃত্বের দেশ গড়ি : খালেদা জিয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক
ছবি: সংগৃহীত

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘পটপরিবর্তনের পর যে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের সুযোগ এসেছে, সেই সুযোগ কাজে লাগাতে দেশবাসীর কাছে আহ্বান রাখতে চাই— আসুন, প্রতিহিংসা-প্রতিশোধ নয়, পারস্পরিক ভালোবাসা ও ভ্রাতৃত্বের মাধ্যমে আমরা সবাই মিলে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশকে সত্যিকার অর্থেই একটি বাসযোগ্য, উন্নত ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করি।’

বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলের সামনের খোলা মাঠে আয়োজিত বিএনপির বর্ধিত কর্মিসভায় লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে খালেদা জিয়া এ আহ্বান জানান।

খালেদা জিয়া বলেন, ‘বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষ, বিশেষ করে তরুণসমাজ আজ এক ইতিবাচক গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সংকীর্ণতা ভুলে দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে আমাদের কাজ করতে হবে।

কিন্তু এখনো ফ্যাসিস্টদের দোসর ও বাংলাদেশের শত্রুরা গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে প্রাপ্ত অর্জনকে নস্যাৎ করার গভীর চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটাতে ইস্পাত কঠিন ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ওদের চক্রান্ত ব্যর্থ করে দিতে হবে। গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য আমাদের সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।
দেশ আজ এক সংকটময় সময় অতিক্রম করছে। আপনাদের এবং ছাত্রদের সমন্বিত আন্দোলনের ফলে ফ্যাসিস্ট শাসকরা বিদায় নিয়েছে। একটা অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তাদের কাছে জনগণের প্রত্যাশা, রাষ্ট্র মেরামতের ন্যূনতম সংস্কার দ্রুত সম্পন্ন করে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়ার জন্য সবার কাছে একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্পন্ন করা।’

বক্তব্যে জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে হতাহত ছাত্র-জনতার প্রতি শ্রদ্ধা ও সমবেদনা জানান খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ সাত বছর পর নেতারা আবার ফ্যাসিস্টমুক্ত বাংলাদেশে একত্রিত হয়েছেন। সে জন্য আল্লাহর কাছে হাজার শুকরিয়া আদায় করছি। দীর্ঘ ফ্যাসিবাদবিরোধী সংগ্রামে যাঁরা শহীদ হয়েছেন এবং সম্প্রতি জুলাই-আগস্টের ফ্যাসিবাদী শাসনের নির্মম ভয়াবহ দমননীতির কারণে গণহত্যায় যাঁরা শহীদ হয়েছেন, তাঁদের প্রতি আমি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। যাঁরা আহত হয়েছেন, তাঁদের প্রতি জানাচ্ছি আন্তরিক সমবেদনা।’

বিএনপির সর্বশেষ বর্ধিত সভা হয় ২০১৮ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি। রাজধানীর লা মেরিডিয়ান হোটেলে ওই অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়া সভাপতিত্ব করেন। এর কিছুদিন পর তাঁকে কারাগারে যেতে হয়।

বৃহস্পতিবারের সভায় দলের নেতাকর্মীদের জনগণকে সম্পৃক্ত করে ঐক্যবদ্ধ বিএনপি গড়ে তোলার আহ্বান জানান দেশের প্রথম এই নারী প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমি যুক্তরাজ্য থেকে অসুস্থ অবস্থায় আপনাদের আহ্বান জানাতে চাই, আসুন জনগণকে সম্পৃক্ত করে বিএনপিকে আগের মতো আন্দোলন, সংগ্রাম ও রাষ্ট্র পরিচালনার নেতৃত্ব দিতে আরো ঐক্যবদ্ধ এবং সুসংহতভাবে গড়ে তুলি। আসুন, আমরা আগামী দিনগুলোতে শহীদ জিয়াউর রহমানের স্বপ্নের আধুনিক, সমৃদ্ধ ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করি। এত ত্যাগের বিনিময় এই অর্জনকে সুসংহত এবং ঐক্যকে আরো বেগবান করি। চিকিৎসার কারণে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করলেও আমি সব সময় আপনাদের পাশেই আছি। দীর্ঘ ১৫ বছর গণতন্ত্রের জন্য, আমার মুক্তির জন্য আপনারা নিরন্তর সংগ্রাম করেছেন। আমাদের অসংখ্য সহকর্মী প্রাণ দিয়েছেন, জুলুম-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। প্রায় সোয়া লাখ মিথ্যা মামলায় জর্জরিত হয়েছেন। এখনো আদালতের বারান্দায় ন্যায়বিচার পাওয়ার আশায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন। আপনাদের শুধু দল নয়, জাতি চিরকাল স্মরণ রাখবে। আমার অবর্তমানে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, সিনিয়র নেতারা এবং আপনারা সবাই নিরন্তর কাজ করে দলকে সুসংহত করেছেন। এ জন্য আমি আপনাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমি বিশ্বাস করি, আপনারা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে আগামী নির্বাচনের জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবেন। আপনারা এমন কোনো কাজ করবেন না, যাতে আপনাদের এত দিনকার সংগ্রাম, আত্মত্যাগ বিফলে যায়। আমাদের সব সময় শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সেই উক্তি মনে রাখা দরকার—ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ।’

শারীরিক অসুস্থতার চিকিৎসা নিতে গত ৭ জানুয়ারি যুক্তরাজ্যে যান খালেদা জিয়া। তিনি লন্ডন ক্লিনিকের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে ছেলে তারেক রহমানের বাসায় চিকিৎসাধীন।