ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির শর্ত অনুযায়ী শনিবার গাজা থেকে আরো ছয় জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে হামাস। এর বিনিময়ে ইসরায়েলি কারাগার থেকে ছয় শতাধিক বন্দিকে ছেড়ে দেওয়ার কথা। ডানপন্থীদের চাপের মুখে নিরাপত্তা মন্ত্রিসভার বৈঠকের জন্য অপেক্ষা করায় যুদ্ধবিরতি ঝুঁকির মুখে পড়েছে।
ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তি স্থগিত করার জন্য ইসরায়েলের সমালোচনা করে হামাস বলেছে যে এটি যুদ্ধবিরতির ‘স্পষ্ট লঙ্ঘন’।
প্রথম ধাপের যুদ্ধবিরতির অধীনে এটাই সবশেষ জীবিত জিম্মি ও ফিলিস্তিনি বন্দি বিনিময়।
শনিবার ইসরায়েলি কারাগার থেকে ৬০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি বন্দির মুক্তি পাওয়ার কথা।
যুদ্ধবিরতি শুরুর পর এটিই সবচেয়ে বেশিসংখ্যক বন্দি মুক্তির ঘটনা। বৃহস্পতিবার কয়েক জিম্মির লাশ ইসরায়েলের কাছে হস্তান্তর করা হলেও ওই দিন কোনো ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হয়নি।
মুক্তি পেতে যাওয়া বন্দিদের মধ্যে প্রায় ৪০০ জন গাজায় হামলা শুরুর পর ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে আটক হয়েছিল। এ ছাড়া আরো শতাধিক বন্দি হয় যাবজ্জীবন, নয়তো দীর্ঘ কারাবাস ভোগ করছিলেন।
মুক্তিপ্রাপ্তদের মধ্যে ৪৫ বছর ইসরায়েলের কারাগারে সাজা ভোগকারী এক ফিলিস্তিনিও থাকার কথা। ইসরায়েলি কারাগার থেকে ছাড়া পাওয়ার পর ১০০ নারী ও শিশুসহ প্রায় ৫০০ জনকে গাজায় নিয়ে যাওয়া হবে।
ইসরায়েলে ফেরত গেলেন ছয়জন
হামাসের কাছ থেকে মুক্তি পেয়ে এরইমধ্যে ছয় ইসরায়েলি তাদের নিজ ভূখণ্ডে ফিরে গেছেন। মধ্য গাজার নুসেইরাতে শনিবার একটি মঞ্চে এলিয়া কোহেন (২৭), ওমর শেম তভ (২২) এবং ইসরায়েলি আর্জেন্টিনার দ্বৈত নাগরিক ওমর ওয়েনকার্টকে (২৩) নিয়ে আসেন হামাস সদস্যরা।
সেখানে রেডক্রসের হাতে জিম্মিদের হস্তান্তর করা হয়। ১৬ মাসের বেশি সময় হামাসের হাতে বন্দি ছিলেন তাঁরা। রেডক্রসের হাতে হস্তান্তরের সময় তাঁদের হাতে মুক্তির সনদ তুলে দেওয়া হয়। একই ধরনের অনুষ্ঠানে দক্ষিণ গাজার রাফায় তাল শোহাম (৪০) এবং এভারা মেঙ্গিসতুকে (৩৮) রেডক্রসের কাছে হস্তান্তর করে হামাস। ষষ্ঠ জিম্মি হিশাম আল সায়েদকেও (৩৭) রেডক্রসের কাছে দেওয়া হয়।
রেডক্রসের গাড়ি এই ছয়জনকে নিয়ে ইসরায়েলি বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করে। পরে তারা নিজ নিজ পরিবারের কাছে ফিরে যায়।
এদিকে যুদ্ধবিরতির শর্তাবলি সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়ন করতে ইসরায়েলের প্রতি আহবান জানিয়েছে হামাস। ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠনটির মুখপাত্র আব্দুল লতিফ আল-কানু বলেছেন, চুক্তির অবশিষ্ট শর্তাবলি এবং মানবিক প্রটোকল বাস্তবায়নের প্রতি ইসরায়েলের অঙ্গীকারবদ্ধ থাকলে সেটি ভবিষ্যতেও জিম্মি-ফিলিস্তিনি বন্দি বিনিময় কার্যক্রম সম্পন্ন করার নিশ্চয়তা দেবে।
টেলিগ্রামে এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, যুদ্ধবিরতির প্রথম পর্যায়ের ৩৩ দিন অতিবাহিত হয়েছে। ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্তাবলি সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন করেনি। গাজার পরিস্থিতি ভয়াবহ। মানবিক প্রটোকল বাস্তবায়ন এবং গাজার জনগণকে আশ্রয় ও ত্রাণ সরবরাহের জন্য ইসরায়েলের ওপর মধ্যস্থতাকারীদের চাপ প্রয়োগ করা প্রয়োজন।