বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরলেই তরুণ প্রজন্ম জিয়াউর রহমান সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানতে পারবে।
শনিবার রাতে রাজধানী মিন্টু রোডে শহিদ আবু সাঈদ আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারে জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন-জেডআরএফ আয়োজিত ‘শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান : যাঁর গল্প আমাদের দর্শন’ শীর্ষক আলোচনা সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, একজন সৈনিকের কমিটমেন্ট হচ্ছে দেশের প্রতি, দেশের মানুষের প্রতি, দেশের মাটির প্রতি; দেশকে রক্ষা করা। দেশের মানুষকে রক্ষা কর, সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা।
তারেক রহমান বলেন, আমরা দেখেছি যখন দেশ ও দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার সময় এসেছে, দেশের স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনার সময় এসেছে, সেই সময় শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান স্বাধীনতা যুদ্ধের ডাক দিয়েছেন। মুক্তিযোদ্ধাদের ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করেছেন। মুক্তিযুদ্ধে আসার জন্য মানুষকে উজ্জীবিত করেছিলেন। একজন সৈনিক হিসেবে তিনি সর্বোচ্চ দায়িত্ব পালন করেছেন। আল্লাহর রহমতে দেশের মানুষকে সাথে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে দেশকে স্বাধীন করেছিলেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, আমি বিশ্বাস করি যেহেতু তিনি ( জিয়াউর রহমান) সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য ছিলেন, আগামীতে যারা সশস্ত্র বাহিনীতে আসবেন; দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব, দেশের মাটিকে রক্ষা করার শপথ নিয়ে যারা আসবেন তাদেরকে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীর উত্তমের কাজগুলো উজ্জীবিত করবে, সাহসী করবে।
জিয়াউর রহমানের জীবনাদর্শ তুলে ধরে তারেক রহমান বলেন, ‘আমরা দেখেছি তিনি যখন রাজনীতিবিদ হিসেবে কাজ শুরু করলেন, তিনি কিন্তু ঢাকার মধ্যে বসে থাকেননি। একজন রাজনীতিবিদের কাজ হচ্ছে দেশের মানুষকে সহযোগিতা করা, মানুষের কাছে তিনি ছুটে গিয়েছেন। মানুষের সাথে কথা বলেছেন, মানুষের সমস্যা জানতে চেয়েছেন, সেভাবেই তিনি সমস্যা সমাধান করেছেন।
সকল পরিচয়ের ঊর্ধ্বে উঠে জিয়াউর রহমান বাংলাদেশি পরিচয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, রাজনীতিবিদ হিসেবে জনপ্রিয় ছিলেন বলেই তার দল বিএনপি সর্বোচ্চ জনপ্রিয়তা নিয়ে টিকে আছে।
অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে ডা. জুবাইদা রহমান নিজের জীবনে শহীদ জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার স্মৃতিচারণ করে বলেন, তাদের উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা আমার মতো অনেক শিশু-কিশোরের জন্য পাথেয়। তিনি জিয়াউর রহমানকে নিয়ে একটি কবিতা আবৃত্তি করেন।
১৯ জানুয়ারি রোববার বহুদলীয় গণতন্ত্রের রূপকার, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৮৯তম জন্মবার্ষিকী। ১৯৩৬ সালের এই দিনে বগুড়ার গাবতলীর নশিপুর ইউনিয়নের বাগবাড়ী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। রসায়নবিদ মনসুর রহমান ও জাহানারা খাতুন দম্পতির পাঁচ ছেলের মধ্যে জিয়াউর রহমান ছিলেন দ্বিতীয়। তাঁর ডাকনাম কমল।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বিপথগামী একদল সেনা সদস্যের হাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নির্মমভাবে সপরিবারে হত্যার শিকার হন। এরপর ঘটনাবহুল ৭ নভেম্বর জিয়াউর রহমান রাষ্ট্র ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসেন।
১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৮১ সালের ৩০ মে একদল বিপথগামী সেনা সদস্যের হাতে নিহত হন সাবেক এই রাষ্ট্রপতি।
শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীর উত্তমের ৮৯তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে শনিবার দুই পর্বের এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন (জেডআরএফ)।
প্রথম পর্বে ঢাকার শাহবাগে শহিদ আবু সাইদ কনভেনশন সেন্টারে দুপুর আড়াইটা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত আলোকচিত্র প্রদর্শনী এবং শিশু-কিশোরদের নিয়ে জিয়াউর রহমান প্রসঙ্গে গল্প বলা অনুষ্ঠান হয়। অনুষ্ঠানের মঞ্চে জিয়াউর রহমানের সঙ্গে বিভিন্ন স্মৃতিচারণমূলক বিষয়ে শিশু-কিশোরদের গান শোনান বরেণ্য কণ্ঠশিল্পী কনকচাঁপা ও বেবি নাজনীন।
পাশাপাশি ছোট্ট শিশুরাও জিয়াউর রহমানের বিষয়ে বক্তব্য তুলে ধরেন। তাদের অন্যতম আগা খান একাডেমির ছাত্র শাহরিন মো. ছোয়াদসহ কয়েকজন। পাশাপাশি মিলনায়তনের বাইরে জিয়াউর রহমানের জীবনঘনিষ্ঠ অসংখ্য ছবি পরিদর্শন করেন শিশু-কিশোরসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ।
এরপর একইস্থানে দ্বিতীয় পর্বে ‘শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান : যার গল্প আমাদের আদর্শ’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় ভার্চুয়ালি সংযুক্ত ছিলেন জেডআরএফের প্রেসিডেন্ট ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট বিশিষ্ট কার্ডিওলোজিস্ট ডা. জুবাইদা রহমান। প্রধান আলোচক ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।