রবিবার

,

১৯শে জানুয়ারি, ২০২৫

বেনজীরের নাম এলো ত্রিপুরাপল্লিতে আগুনে, গ্রেপ্তার ৪

নিজস্ব প্রতিবেদক
ছবি: সংগৃহীত

বান্দরবানে ত্রিপুরাদের ওপর হামলা ও ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার ঘটনায় সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের ‘গুন্ডাদের’ দায়ী করেছেন পার্বত্য উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা। তিনি এ হামলা ও অগ্নিসংযোগের নিন্দা জানিয়ে দায়ীদের গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছেন। বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) রাতে এক বিবৃতিতে এমন নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানান মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো রেজুয়ান খান।

বান্দরবানের লামা সরই ইউনিয়নে ত্রিপুরাপল্লি আগুনে পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের নাম উঠে এসেছে। এ ঘটনায় বেনজিরের কেয়ারটেকারসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গ্রেপ্তার চারজন হলেন—স্টিফেন ত্রিপুরা (৫০), মশৈনিয়া ত্রিপুরা (৪৪), যোয়াকিম ত্রিপুরা (৫২) ও মো. ইব্রাহিম (৬৫)। এদের মধ্যে বেনজীর আহমেদের নামে দখল করা জমির দেখভাল করতেন মো. ইব্রাহিম। তাদের সবার বাড়ি সরই ইউনিয়নে। বুধবার রাতে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

পূর্ববেতছড়া পাড়ার বাসিন্দারা জানান, পাড়ায় ১৯টি পরিবার থাকত। এর মধ্যে ১৭টি পরিবারের ঘরবাড়ি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।

মঙ্গলবার রাতে বান্দরবানের লামায় ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের ঘর-বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা। তিনি বলেছেন, বান্দরবান গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, পলাতক সাবেক পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদের সন্দেহভাজন গুন্ডারা জায়গা দখলের নামে এই জঘন্য হামলা চালিয়েছে। তার নির্দেশে ঘটনায় দায়ীদের গ্রেফতার করা হয়েছে।

পুলিশ সুপার মো. শহীদুল্লাহ কাউছার বলেন, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার সঙ্গে আরও কারা জড়িত তা উদঘাটনে চারজনকে রিমান্ডের আবেদন করা হবে।

তিনি জানান, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত গুঙ্গামনি ত্রিপুরা বাদী হয়ে মামলা করেছেন। মামলায় ৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। যাদের মধ্যে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাকে চাঞ্চল্যকর উল্লেখ করে পুলিশ সুপার বলেন, এখানে দুইটি পাড়া রয়েছে। টংঙ্গা ঝিড়ি ও সফি চন্দ্র পাড়ায় বসবাস করে ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের খ্রিস্টান ধর্মালম্বীরা। পূর্বে সফি চন্দ্রপাড়ার ইব্রাহীম নামে একজন এই জায়গার দেখাশোনা করতেন। পাশাপাশি সফি চন্দ্রপাড়ার ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের লোকজন সেখানে বসবাস ও দেখাশোনা করতেন। ৬ মাস আগে তারা এই জায়গা থেকে চলে গেলে টংঙ্গা ঝিরির ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের লোকজন এখানে বসবাস করতে শুরু করেন।

টংঙ্গা ঝিরির বাসিন্দা অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত গুঙ্গামনি ত্রিপুরা জানান, পূর্বে যারা এই জায়গায় ছিলেন তারা ঘরগুলো পুড়িয়ে দিয়েছেন। এর আগে বিভিন্ন সময়ে তারা চাঁদা দাবি করেন।

পুলিশ সুপার বলেন, গতকালের ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে অভিযানে নামে, স্থানীয়দের সাথে কথা বলে যে টুকু জানা গেছে তা হলো পূর্ব বিরোধিতা ও জায়গা জমি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।

জায়গা সম্পর্কিত বিরোধের বিষয়ে জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন বলেন, ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের দুইটি পাড়ায় বসবাসকারী জনসাধারণের মধ্যে বিরোধের জেরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটেছে। ঘটনাস্থল পুলিশের সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের বাগান বলে লোকমুখে প্রচলিত আছে। তবে এই সম্পর্কিত কোনো তথ্য, প্রমাণ ও নথি আমাদের হাতে আসেনি।

তিনি বলেন, জায়গা সম্পর্কিত মামলার কার্যক্রম শুরু হলে তখন জায়গার দখল বেদখল নিয়ে দুই পক্ষের মাঝে দ্বন্দ্ব শুরু হয়, তবে এ জন্য ঘর পোড়ানোর ঘটনা খুবই দুঃখজনক। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার জড়িতদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। ক্ষতিগ্রস্তদের প্রয়োজন হলে পুনর্বাসনের বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হবে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হয়েছে।