রবিবার

,

১৯শে জানুয়ারি, ২০২৫

এক বছর ধরে পরিকল্পনায় বাশারকে ক্ষমতাচ্যুত করে বিদ্রোহীরা

এটিভি ইউএসএ নিউজ ডেস্ক
ছবি: সংগৃহীত

সিরিয়ার পলাতক প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করতে অন্তত এক বছর ধরে পরিকল্পনা করেছিলেন বিদ্রোহীরা। শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম দৈনিক গার্ডিয়ান।

প্রতিবেদন উল্লেখ করা হয়, সিরিয়ার সাম্প্রতিক সফল সরকারপতন আন্দোলনের অগ্রবাহিনী ছিল দেশটির সরকারবিরোধী বিভিন্ন গ্রুপ এবং কয়েকটি ইসলামপন্থি সশস্ত্র গোষ্ঠী। এই বাহিনীর নেতৃত্বে ছিল হায়াত তাহরির আল শামস (এইচটিএস) নামের একটি ইসলামপন্থি সশস্ত্র গোষ্ঠী। এ গোষ্ঠীটি একসময় আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠী আল কায়েদার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিল।

এইচটিএসের একজন কমান্ডার এবং গোষ্ঠীটির সামরিক শাখার সাবেক প্রধান আবু হাসান আল-হামউই’র সঙ্গে যোগাযোগ করে গার্ডিয়ান প্রতিনিধি। হামউই জানান, ২০১৯ সালে সিরীয় সেনাবাহিনীর নেতৃত্বাধীন যৌথ বাহিনী সরকার বিরোধীদের লক্ষ্য করে যে ব্যাপক অভিযান পরিচালনা করেছিল, সে সময় তারা সরকারবিরোধী আন্দোলনের মধ্যে একটি বড় ত্রুটি শনাক্ত করতে সক্ষম হন। আর সেই ত্রুটি ছিল যথাযথ নেতৃত্বের অভাব।

২০১১ সালে গণতন্ত্রের দাবিতে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ শুরু হয় সিরিয়ায়। এক পর্যায়ে তা সরকার পতন আন্দোলনের দিকে মোড় নিতে থাকে। আল-কায়দা এবং অন্যান্য ইসলামপন্থি কয়েকটি গোষ্ঠীও এই আন্দোলনে তৎপরতা শুরু করে। বিক্ষোভ দমনে সহিংসতার পথ বেছে নেন বাশার আল আসাদ। এর জেরে গৃহযুদ্ধ শুরু হয় সিরিয়ায়।

সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশ ইদলিবে ২০১৭ সালে এইচটিএস বা হায়াত তাহরির আল শামস।

আবু হাসান আল-হামউই জানান, সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারী এবং বিভিন্ন ইসলামপন্থি গোষ্ঠীর প্রধান ঘাঁটি বা ভরকেন্দ্র হয়ে ওঠে ইদলিব এবং দক্ষিণ সিরিয়া। সেখানেই ‘ইউনিফায়েড ওয়ার রুম’ নামের একটি জোট গঠন করে এইচটিএস। হায়াত তাহরির আল শামস ছাড়াও সেই জোটের সদস্য ছিল ২৫টি সমস্ত্র ইসলামপন্থি গোষ্ঠী।

২০১৯ সালে গঠিত হয় এই জোট, কিন্তু সে সময় সরকারপতন অভিযান বা এই সংক্রান্ত পরিকল্পনা করার মতো বাস্তব পরিস্থিতি ছিল না। যৌথ বাহিনীর বিধ্বংসী অভিযানের মুখে টিকে থাকাটাই তখন ছিল সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

তবে পরিস্থিতিতে বদলাতে থাকে ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে। গাজা উপত্যায় ইসরায়েলি বাহিনীর ভয়াবহ অভিযান শুরু হওয়ায় সিরিয়া থেকে মনোযোগ সরিয়ে নিতে বাধ্য হয় ইরান। আর রাশিয়া অনেক আগে থেকেই ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল।

গার্ডিয়ানকে হামউই জানান, নভেম্বরে সিরিয়ার দুই প্রধান মিত্রের মনোযোগ সরে যাওয়ার পর থেকেই তারা সরকারবিরোধী আন্দোলনের পরিকল্পনা শুরু করেন।

হামউই বলেন, “আমরা পরিকল্পনার শুরুর দিকে একটি ইস্যুতে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পেরেছিলাম; সেটি হলো— আমাদের সবার আগে আলেপ্পোর দখল নিতে হবে। কারণ অতীত ইতিহাস এবং নিজেদের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা বুঝতে পেরেছিলাম যে যতক্ষণ পর্যন্ত আলেপ্পোর পতন না ঘটবে, ততক্ষণ দামেস্কের পতন সম্ভব নয়।”

“এছাড়া আমাদের সামনে আর একটি চ্যালেঞ্জ ছিল তেহরান এবং মস্কোর সমরাস্ত্র। যে উন্নত প্রযুক্তির সমরাস্ত্র তারা সিরিয়ার সেনা বাহিনীকে দিয়েছিল, সেসব আমাদের ছিল না। এ অবস্থায় অন্যান্য সমরাস্ত্রের পাশাপাশি ড্রোন, বিশেষ করে সুইসাইড ড্রোন তৈরির দিকে আমরা বিশেষ মনোযোগী হই এবং শাহীন নামে একটি সুইসাইড ড্রোনও প্রস্তুত করি।”

মাত্র ১২ দিনের অভিযানে আমরা দামেস্ক দখল করতে সক্ষম হয়েছি এবং এক্ষেত্রে আক্ষরিক অর্থেই শিকারী বাজপাখির মতো আমাদের সহায়তা করেছে শাহীন”, গার্ডিয়ানকে বলেন আবু হাসান আল হামউই।