শনিবার

,

২৫শে জানুয়ারি, ২০২৫

বাংলাদেশ-ভারতে সম্পর্কের টানাপোড়েনের মধ্যে বৈঠক ঢাকায়

নিজস্ব প্রতিবেদক
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ–ভারত দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের টানাপোড়েনের মধ্যে আগামী ৯ ডিসেম্বর দুই দেশের পূর্বনির্ধারিত পররাষ্ট্রসচিবদের বৈঠক ঢাকায় অনুষ্ঠিত হতে চলেছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ৫ ডিসেম্বর এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

সব কিছু ঠিক থাকলে এটিই হবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ভারতীয় কোনো সিনিয়র কর্মকর্তার প্রথম ঢাকা সফর।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকদের মতে, ভারতের পররাষ্ট্র সচিব যে বাংলাদেশে আসছেন এতেই দুই দেশের সম্পর্কে একটা ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। সাম্প্রতিক সময়ের সম্পর্কের টানাপোড়েনের অবসান ঘটবে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ও পাবলিক ডিপ্লোম্যাসি উইংয়ের মহাপরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল আলম মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বলেন, ‘৯ ডিসেম্বর এফওসি অনুষ্ঠিত হবে এবং আমরা দু’দেশের মধ্যে প্রধান প্রধান দ্বিপক্ষীয় ইস্যুগুলো নিয়ে আলোচনা করব।’

বাণিজ্য, ভিসা সংযোগ, সীমান্ত হত্যা ও পানি বন্টনসহ নির্ধারিত মূল বিষয়গুলো এ উচ্চ-পর্যায়ের আলোচনায় প্রাধান্য পাবে।

তিনি আরও বলেন, সংলাপের প্রস্তুতির সমন্বয়ের জন্য ইতোমধ্যে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।

পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উপর জোর দিয়েছেন।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘এটি খুবই স্পষ্ট যে, আমরা (ভারতের সঙ্গে) একটি ভালো সম্পর্ক চাই। তবে উভয় পক্ষরই তা চাওয়া ও এ লক্ষ্যে কাজ করা উচিত।’

হিন্দুস্তান টাইমসের এক খবরে বলা হয়েছে, বিক্রম মিশ্রির এই সফরটি এমন এক সময়ে হতে চলেছে, যখন বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্কে অভূতপূর্ব উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। হিন্দু সংখ্যালঘু ইস্যু এবং রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগের মামলায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেপ্তারের পর বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী কয়েকটি ভারতীয় রাজ্যে বিক্ষোভ হচ্ছে।”

গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে ভারতে অবস্থানরত ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের বিষয়টি এজেন্ডায় অন্তর্ভুক্ত হবে কিনা জানতে চাইলে রফিকুল আলম পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আগের ব্রিফিংয়ের কথা উল্লেখ করেন।

২১ নভেম্বর মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে মহাপরিচালক তৌফিক হাসান বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে (শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ) আলোচনার সুযোগ রয়েছে।’
ছাত্র-নেতৃত্বাধীন জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের সময় গণহত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে শেখ হাসিনা বর্তমানে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারের সম্মুখীন হচ্ছেন।

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পূর্ববর্তী সকল চুক্তি পর্যালোচনায় বিলম্বের বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে মুখপাত্র বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের অপারেশনাল চ্যালেঞ্জের কারণে এই বিলম্ব হচ্ছে। পরিস্থিতি স্থিতিশীল হলে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সমস্ত চুক্তি পর্যালোচনা এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সাথে সমন্বয় করে তা প্রকাশ করা হবে বলে তিনি আশ্বাস দেন।

ত্রিপুরার আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারি হাইকমিশনে হামলা এবং বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা অবমাননার ঘটনায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত মঙ্গলবার ভারতীয় রাষ্ট্রদূত প্রণয় ভার্মাকে তলব করে কড়া প্রতিবাদ জানায়।

বৈঠক শেষে প্রনয় ভার্মা সাংবাদিকদের বলেন, “কোনো নির্দিষ্ট একটি ইস্যুকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক মূল্যায়ন করা যাবে না। আমরা আমাদের আলোচনা চলমান রাখবো। বৈঠক তারই একটা অংশ। আমাদের বিস্তৃত সম্পর্ক রয়েছে, পারস্পরিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট সম্পর্ক রয়েছে। আমরা একটি ইস্যু দিয়ে সেটি মূল্যায়ন করতে পারবো না। আমাদের পরস্পর-নির্ভরতার বিষয় রয়েছে, যেটি দুই দেশের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। সর্বশেষ দুই মাসে আমাদের পারস্পরিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে ইতিবাচক কিছু উন্নয়ন হয়েছে। আমাদের অনেক ইতিবাচক বিষয় রয়েছে। আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি। একসঙ্গে কাজ করে যাবো।”

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মো. জসিম উদ্দিন ও ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিসরি নিজ নিজ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন।